কৃষক লীগের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কোনো দিন পালাইনি, পালায় না।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (কেআইবি) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে কৃষক লীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যদিও সংসদে নেই, সেখানে না থাকলে বিরোধী দল বলা যায় না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। পারে নাই। তারপর এরশাদ ও খালেদা জিয়াও পারে নাই। এরা তো রীতিমতো একাত্তর সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালিয়েছে। ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচির অর্থের জোগান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন, কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে? যত চুরি করা টাকা ছিল, সেগুলো এখন বেরোচ্ছে? এক একটি মিটিং করতে যে টাকা খরচ করছে, সেগুলো কোথা থেকে আসছে? ২০০৭ সালে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমান বিদেশে পালিয়েছিল বলে আবারও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি। সেই আসামি যে দলের নেতা, তাদের মুখে বড় বড় কথা। আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এত লম্বা কথা আসে কোথায় থেকে? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। আবার দেখলাম তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তারা যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, মানুষ পুড়িয়েছে, ২০০১ নির্বাচনের পর যেভাবে আমার নেতাকর্মীদের অত্যাচার করেছে, আমরা যদি তার এক ভাগ প্রতিশোধ নিতাম, তাদের হদিস পাওয়া যেত না। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি।

তিনি বলেন, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়ে দেড় মাসও থাকতে পারেনি। ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেছিলেন। ২০০৬ সালের ১ কোটি ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করেন। এই ভোটও বাতিল হয়েছিল। ভোট চুরির কারণে দুইবার যাদের নির্বাচন বাতিল হয়েছে, তাদের মুখে এত লম্বা কথা আসে কীভাবে? একটা প্রবাদ আছে, চোরের মায়ের বড় গলা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসতে দেবে না। সব আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাকে বলে দিয়েছে, আমাকে নিয়ে ঢাকায় যেন অবতরণ না করে, ঢাকায় তাদের অবতরণ করতে দেবে না। এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার পরও আমি এক রকম জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি। কৃষকদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রধান বলেন, কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। ৯৬ সালে আমরা যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আমাদের কান্ট্রি ডিরেক্টর আমার সঙ্গে লম্বা একটা তালিকা নিয়ে বসেন। তাদের অনেক প্রস্তাব এই করতে হবে, ওই করতে হবে। আমি শুধু বলেছিলাম দেশটা আমাদের, কি করতে হবে আমি জানি। দেশের মানুষের জন্য কোথায় কীভাবে কাজ করতে হবে সেটা আমার জানা আছে। তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন যে, কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। তাহলে আমরা উত্তর দেব না। তাকে বলেছিলাম অর্থ দেওয়া লাগবে না, আমরা নিজের টাকা কৃষকদের দেব। কারণ, এই কৃষকরা সার চাইতে গেলে তাদের গুলি করে হত্যা করে খালেদা জিয়া। আমি নিজে ছুটে গিয়েছিলাম। আমি কৃষক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। বিদ্যুৎ চাইছিল সেচের জন্য, সেটা খালেদা জিয়ার কাছে অপরাধ ছিল। গুলি করে তাদের মারে। আমি ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে, প্রতিটি পরিবারকে আমরা সহযোগিতা করেছি। আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকি। মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের দায়িত্ব।

কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।