ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অবৈধ সম্পদের পাহাড়

জাগৃকের উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার আটক

জাগৃকের উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার আটক

ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি এবং জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেয়ার অভিযোগে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) উচ্চমান সহকারী ও সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাস্টার রোলে চাকরির আবেদন করার সময় ঢাকার একটি স্কুল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেন দেলোয়ার। কিন্তু ২০০৬ সালে চাকরি স্থায়ী করার সময় কুমিল্লা বোর্ডের সার্টিফিকেট জমা দেন তিনি। অন্য একজনের সার্টিফিকেটে নিজের নাম বসিয়ে তৈরি করা ছিল ওই সার্টিফিকেট। আবার প্রথম সার্টিফিকেটে বাবার নাম শিশু মিয়া থাকলেও পরের সার্টিফিকেটে দেলোয়ারের বাবার নাম আব্দুল ওহিদ। আর দুই সার্টিফিকেটের মার্কশিটে বিভাগ দুই রকম। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে চাকরির সুবাদে দেলোয়ার হোসেন আবাসন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন অবৈধ সম্পদের বিষয়ে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তাকে তলবও করে।

দেলোয়ারের অবৈধ সম্পদের বিবরণ : দেলোয়ারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকরি জীবনে প্রথম মায়ের নামে টাঙ্গালি হাউজিং এস্টেটে একটি প্লট বরাদ্দ নেন দেলোয়ার। এরপর প্লটটি দ্রুত বিক্রি করে দেন। এরপর তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ বয়রা হাউজিং এস্টেট, খুলনায় ব্লক নং-এ প্লট-৪৫-এর ৩ কাঠা জমি শিল্পী/সাহিত্যিক কোটায় বরাদ্দ করে নেন। তার স্ত্রীর প্লটের জন্য আবেদনপত্রে স্বামীর নাম লুকিয়ে পিতার নাম শাহজাহান উল্লেখ করেন। অথচ শিল্পী হিসেবে বেতার/টেলিভিশনের কোনো সনদ দাখিল করেনি। ওই প্লটের প্রথম কিস্তির ৬ লাখ টাকা পরিশোধের পর পরবর্তী বছরেই দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির মোট ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তথা সমুদয় মূল্য বাবদ ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা মাত্র এক বছরে পরিশোধ করেন। পরে প্লটটি আবার ২০১৫ সালের ২৮ জুন জোবায়ের হোসেন নামে একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। দেলোয়ার কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটে তার নিজের নামে সাড়ে ৩ কাঠা জমি বরাদ্দ নেন। ওই প্লটের দাম দুই কিস্তিতে প্রায় ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করে আবার সেটি ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এছাড়া লালমাটিয়ায় ব্লক বি’তে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যা অন্যের নামে। দেলোয়ার হোসেন সেবাপ্রত্যাশী বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঘুষ নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন।

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে শুনানি করা হয়। তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে রাখা, ফাইল গায়েব করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়ম করে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিদেশে বাড়ি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে আমরা ইমিগ্রেশনকে চিঠি লিখেছি।

সচিব আরো বলেন, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে সিবিএ থাকতে পারবে না। সিবিএ কোথায় থাকবে সেটি শ্রম আইনে বলা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক থাকলে তাদের মজুরি নির্ধারণ করা সিবিএ’র কাজ। সেখানে শ্রম আইনের বর্হিভূত গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, এই প্রতিষ্ঠানে সিবিএ থাকতে পারবে না। যদি সিবিএ থাকে তাহলে চিঠি দিয়ে বাতিল করা হবে। তবে দলীয়ভাবে কোনো সংগঠন করতে চাইলে করা যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত