ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে উন্নয়নকাজের নামে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি থামেনি

চট্টগ্রামে উন্নয়নকাজের নামে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি থামেনি

চট্টগ্রাম নগরীতে বিভিন্ন সংস্থা হুটহাট রাস্তা কাটায় বছরজুড়ে দুর্ভোগ লেগেই আছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রাস্তা কাটার পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি অফিসগামী লোকজন চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ করার কোনো নীতিমালা গড়ে উঠেনি। এজন্য যখন তখন কাটা পড়ছে রাস্তা। আর সাধারণ নগরবাসী দুর্ভোগ পোহান। এবার রাস্তা কাটা নিয়ে খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি চসিক পরিষদের এক সভায় এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা রাস্তা বানাব আর অন্য অন্য সংস্থা রাতের আঁধারে রাস্তা কেটে ফেলে। এতে পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গেল বৃহস্পতিবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে নির্বাচিত ষষ্ঠ পরিষদের ৩০তম সভায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রকল্প নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় নেই। দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যা আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের চাপে পিষ্ট চট্টগ্রামকে বসবাসের উপযোগী রাখতে প্রয়োজন সব সরকারি সংস্থার সমন্বয়। আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। অন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করতে হলে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। আমরা রাস্তা বানাব আর অন্য সংস্থা রাতের আঁধারে রাস্তা কেটে ফেলবে, এভাবে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়া সম্ভব নয়। মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে বর্তমানে জনসংখ্যা ৭০ লাখ। যা আবার প্রতিদিন বাড়ছে। এই বাড়তি চাপ মোকাবিলায় সবগুলো সরকারি সংস্থা জনসাধারণকে সাথে নিয়ে কাজ না করলে নিকট ভবিষ্যতেই চট্টগ্রাম বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। ডেঙ্গু প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ডেঙ্গুর উৎস সন্ধানে পরিচালিত অভিযানে নির্মাণাধীন ভবনে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামে অনেক সরকারি ভবন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এ ভবনগুলোতেও যাতে ডেঙ্গুর প্রজননক্ষেত্র না থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চসিকের পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার সেবা। প্রয়োজনে করোনাকালের মতো চসিক পরিচালিত হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক বিশেষায়িত কেন্দ্র চালু করা হবে।

ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতা চেয়ে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকায় যথেষ্ট রাস্তা আছে। কিন্তু যানজট হচ্ছে। যার মূল কারণ অবৈধ পার্কিং। আমি কলকাতায় নিউ মার্কেটে দেখেছি সেখানে রাস্তা প্রশস্ত না হলেও ১০০ রুপি দিয়ে পে-পার্কিং চালু করা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রামে এই পে-পার্কিং চালু করতে গেলে কিছু মানুষ দুর্ঘটনার ভয় দেখায়। অথচ পোর্ট কানেক্টিং রোডে রাত-দিন ডাবল লাইন করে অবৈধভাবে ট্রাক লরি দাঁড়িয়ে থাকে। এসব গাড়ি থেকে চুঁইয়ে পড়া তেলে রাস্তার বিটুমিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। মাঝিরঘাটে রাস্তায় ৩০ থেকে ৪০ টনের গাড়ি চলে নতুন রাস্তা নষ্ট করে ফেলেছে।

তিনি বলেন, অবৈধ দখলবাজির কারণে ফুটপাথে মানুষ হাঁটতে পারে না। এমনকি একটি সংস্থা ফুটপাথ দখল করে চশমার দোকান, খাবারের দোকান বসিয়ে ফেলেছে। আমরা সকালে উচ্ছেদ করি, দখলদাররা সন্ধ্যায় আবার দোকান বসায়। সিএমপি কমিশনারকে বলেছি- প্রতিটি থানা পুনরুদ্ধার করা ভূমি সংরক্ষণে মনিটরিং করলে সাফল্য আসবে। শহরে অবৈধ মোটর রিকশা অনেক বেড়ে গেছে। এগুলো দুর্ঘটনা আর লোডশেডিং বাড়াচ্ছে। সড়কের গতি কমাচ্ছে। পুুলিশের উচিত কঠোর অভিযান চালিয়ে মোটর রিকশার অত্যাচার কমানো।

নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মো. ইলিয়াছ বলেন, বহদ্দারহাট থেকে খতিবের হাটগামী সড়কটি এক সময় চলাচল অযোগ্য ছিল। বর্তমানে সড়কটি নতুন করে নির্মাণের ফলে যানবাহন চলাচলসহ যাতায়াতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু এই সড়কে হঠাৎ করে কেটে প্রকল্পের কাজ পাইপলাইন স্থাপন করে বিভিন্ন সংস্থা। এতে সুন্দর পরিচ্ছন্ন এই সড়কে অন্তত বছরে একাধিকবার কেটে প্রকল্পের কাজ করা হয়। এতে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত হওয়ার পাশাপাশি লোকজন পায়ে হেঁটে চলতে বিড়ম্বনার মুখে পড়েন। বর্ষা মৌসুমে সড়ক কাটা হলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এজন্য সব সংস্থার সমন্বয় করে সড়ক কাটা উচিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত