ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘সন্ত্রাসী দল’ বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ

ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে বাংলাদেশ

বিএনপির সংসদে যাওয়ার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অন্য দলগুলো
ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে বাংলাদেশ

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে আবারও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন কানাডার আদালত। এ নিয়ে কানাডার আদালতে পঞ্চমবার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করা হলো। এরপরও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আইনে বিএনপির কোনো বাধা না থাকলেও তারা সংসদে গিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার নৈতিকতা হারিয়েছে বলে মনে করছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।

সূত্র জানায়, বিএনপি বারবার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলেও একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ মহান সংসদে আইন প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ নিলে কুলষিত হতে পারে মহান সংসদ।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে কয়েকবার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দলটিকে অভিহিত করেন কানাডার আদালত। এর ফলে দেশ-বিদেশে দলটি ধাক্কা খাচ্ছে। সন্ত্রাসী সংগঠন হওয়ায় জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দলটির সংসদে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, বিদেশের কোনো আদালতে কোনো রায় দিলে আমরা সেটা গুরুত্ব দেব না। দেশের আদলতে কোনো নির্দেশনা দিলে আইন অনুযায়ী আমরা তা মানতে বাধ্য। আর বিএনপি যেহেতু ইসির নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল তাই তারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।

জানা যায়, মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক নামে এক বিএনপিকর্মী কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে তা নাকচ করে দেন দেশটির ফেডারেল কোর্ট। রায়ে উল্লেখ করা হয়- ওই ব্যক্তি এমন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেই সংগঠন বল প্রয়োগ এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে। সবশেষ ১৫ জুন একটি জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তির সময় আদালতের বিচারক বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেন। বিএনপির ওই কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেয়ার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল রিভিউটি দায়ের করা হয়।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার উল্লেখ করে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন মোহাম্মদ জিপসেদ ইবনে হক। সেই রায় রিভিউতে দেশটির ফেডারেল কোর্টের রায়ে উল্লেখ আছে, আবেদনকারী ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য ছিলেন। কানাডার অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বিএনপিকে এমন একটি সংগঠন বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পেয়েছে যারা, বল প্রয়োগ এবং নাশকতায় জড়িত থেকে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেছে।

ফেডারেল কোর্টের এই রিভিউয়ের মানদণ্ড হিসেবে তুলে ধরা হয়, ২০১৮ সালে মাসুদ রানা ও ২০২২ সালে সেলিম নামে বিএনপির অপর দুই কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রার্থনা নাকচ করে দেয়ার বিষয়টি। ওই সময়েও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে এই দুই বাংলাদেশির রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রার্থনা বাতিল করা হয়। এর আগে ২০১৭ সালে মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মীর কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার পর ফেডারেল কোর্টে এই রিভিউর আবেদনে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির কর্মী হিসেবে মোস্তফা কামাল নামে এক ব্যক্তি আশ্রয় চাইলে দ্বিতীয় দফায় বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সে বছর অক্টোবরে মাসুদ রানা এরপর ২০২২ সালে ছাত্রদল কর্মী সেলিম বাদশার অভিবাসন নাকচ করার সময়ও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করেন কানাডার আদালত।

এদিকে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কানাডার আদালতের এমন রায় তুলে ধরা হয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলের সমর্থক নয়। ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের দেশভেদে পক্ষপাতমূলক আচরণের সমালোচনা করে প্রশ্ন করা হলে মিলার বলেন, যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, সেখানেই উদ্বেগ জানায় ওয়াশিংটন।

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি যে সন্ত্রাসী সংগঠন, তা আবারও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হলো।

মন্ত্রী বলেন, ইতিপূর্বে বিএনপির কয়েকজন সদস্য যখন কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তখন কানাডার আদালত তাদের রায়ে বলেছিলেন- বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে বল প্রয়োগ করে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তারা গাড়ি-ঘোড়া পোড়াচ্ছে, মানুষ পোড়াচ্ছে। এরপর আবার কয়েক দিন আগে বিএনপির আরেকজন সদস্য সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং সে ক্ষেত্রে কানাডার ফেডারেল আদালত আবার একই রায় দিয়েছেন যে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। সুতরাং, তাদেরকে আর রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া যাবে না এবং এই মর্মে তার আবেদন তারা খারিজ করে দিয়েছেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির লজ্জা থাকা উচিত যে কানাডার আদালত পঞ্চমবারের মতো তাদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিলেন এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এভাবে যখন বিএনপি সদস্যরা আবেদন করেছে, অনেক জায়গাতেই প্রায় অনুরূপ মন্তব্য করেছে যে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। অন্যদিকে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে কানাডার আদালত রায় দেননি বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করেছে- এই মর্মে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন এজেন্সি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করতে গণমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, কানাডার আদালতের ২৬ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ রায়ের দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ৩ নম্বর সেকশনে বলা হয়েছে- ‘ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট এমন কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ পায়নি যাতে প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত কোনো সংগঠন। একদম সুস্পষ্ট কথা।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত