‘ভোট কৌশল’ নিয়ে ঘরে ফিরবে তৃণমূল

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

হাতে সময় কম, মাত্র কয়েক মাস। চলতি বছরের ডিসেম্বরে হতে পারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের মাঠে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের আগে তৃণমূল গুছিয়ে সংগঠন মজবুত করার চিন্তা আওয়ামী লীগের। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের জন্য জেতাতে; দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের মাঠে নামাতে চায় ক্ষমতাসীনরা। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ বর্ধিত সভায় আরো উপস্থিত থাকবেন দলীয় এমপিসহ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিরা। বর্ধিত সভা থেকে ‘ভোট কৌশলে’র বার্তা নিয়ে ঘরে ফিরবেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে এমনটা ধরেই ‘ভোট কৌশল’ নির্ধারণ করবে ক্ষমতাসীনরা। আর আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে, কোন কৌশলে তা মোবাবিলা করা হবে, সে বার্তাও দেওয়া হবে নেতাদের। এছাড়া দলের পদবঞ্চিত-ত্যাগী অভিমানীদের রাগ নিবারণেরও বার্তা দেওয়া হতে পারে বলে জানানো গেছে। চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জবাব দিতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কৌশলে আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যে সব নেতাকর্মী অভিমান করে দলের সাংগঠনিক কাজ থেকে দূরে সরে আছেন, তাদেরও রাগ ভাঙাতে কাজ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনিক নেতারা।

জানা গেছে, জেলায়-জেলায় সাংগঠনিক ত্রুটি কাটিয়ে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী পরিকাঠামোয় দাঁড় করাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা। অভিমানীদের রাজনীতির মাঠে ফেরাতে দফায়-দফায় জেলা ও উপজেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তারা। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব বাদ দিয়ে দেশ-জাতি ও দলের স্বার্থে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। অতীতের সব দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে আওয়ামী পরিবারে সন্তান হিসেবে, এক সঙ্গে কাজ করতে বলা হচ্ছে। পাশাপশি ভবিষতে পদবঞ্চিত-ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার বিষয়েও আশ্বাস দিচ্ছেন নেতারা। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দলের পদ-পদবীধারী নেতাদেরও গ্রুপবাজী বন্ধে সর্তক করা হচ্ছে। পাশাপশি দলের শৃঙ্খলা মেনে নেতাকর্মীদের বিনয়ী হতে বলা হচ্ছে। অপকর্ম করে দলীয় পরিচয়ে কেউ ছাড় পাবে না বলে সাফ-সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভোটের আগে দলকে সুসংগঠিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। এজন্য বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতা ও সর্ব স্তরের জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিবেন তিনি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের বিশেষ এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি ছাড়াও দলীয় ঐক্য সুসংহত ও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয় থাকবে। পাশাপশি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, আওয়ামী লীগে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। এই পরিবারের সকল সদস্য যাতে এক ও অভিন্ন থাকে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে পৃথিবীর কোনো অপশক্তি হারাতে পারবে না। দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শত ব্যস্ততার মাঝেও সংগঠনের সার্বক্ষাণিক খোঁজখবর রাখছেন। আমরা তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। দলের মধ্যে যারা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। দলের অনেক পরীক্ষিত নেতাকর্মী অভিমান করে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। দলের নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা নৌকার প্রশ্নে কখনো ঘরে বসে থাকে না। পদবঞ্চিতদের বিভিন্ন কমিটিতে পদায়ন করা হচ্ছে। তাদের সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় করা হচ্ছে। অতীতে যারা চেইন অব কমান্ড ব্রেক করেছে, তাদের অনেককে আবার সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রাণ হচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কারণে আওয়ামী লীগ আজকে গণমানুষের দলে পরিণত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মূল বিষয় হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়া। শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং থাকবে না। গ্রুপ থাকবে একটাই শেখ হাসিনার গ্রুপ।