ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বর্ষণে ফের ডুবল চট্টগ্রাম

* টাইগার পাসে হালকা পাহাড় ধসে আতঙ্ক। * সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত। * খাতুনগঞ্জের পণ্যের আড়তে পানি।
বর্ষণে ফের ডুবল চট্টগ্রাম

হালকা থেকে ভারি বর্ষণে এবারো ডুবল চট্টগ্রাম মহানগরীর নিম্নাঞ্চল। গতকাল ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কয়েক দফা বর্ষণে নগরীর নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে যায়। বন্ধের দিন থাকায় অফিস কিংবা স্কুলগামী লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। তবে নিচু এলাকার ভবনগুলোতে পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। গত বুধবার খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একদফা তলিয়ে যায় পানির নিচে। সেই ক্ষতি কেটে না উঠতেই গতকালের ভারি বর্ষণে প্রচুর দোকানপাট পণ্যের আড়ত ডুবে যায়। এতে ব্যবসায়ীরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এদিকে ভারি বর্ষণে নগরীতে ফের পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। নগরীর টাইগার পাস এলাকায় গতকাল বেলা পৌণে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই এলাকার সড়কে কিছু সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রামসহ দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরো তিন দিন অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি ও জলজটে একাকার নিচু এলাকা। টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে সড়ক ও অলিগলি। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পানি সড়কে উঠে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল থাকায় পানি সরতে না পেরে অনেক ঘর ও দোকানপাটের ভেতর পানি ঢুকে যায়। বৃষ্টিতে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকা মোহরা, হামিদচর, চর রাঙামাটিয়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, বাস টার্মিনাল, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখান নগর, প্রবর্তক মোড় ডুবে গেছে। এছাড়া আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ নগরীর নিচু এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতা দেখা দেয় মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে যায়। সড়ক ডুবে যাওয়ায় যাতায়াতে কিছু কিছু এলাকায় নৌকা ব্যবহার করতে দেখা যায়। বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ায় আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হয়ে যায়। কোথাও কোথাও জ্বলেনি চুলা।

সরেজমিন সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে ডুবেছে খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার অনেক দোকান। এতে ব্যাহত হয়েছে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা। জোয়ারের পানিতে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আমিন মার্কেট, সোনামিয়া মার্কেট, চাঁন্দ মিয়া লেন, হামিদুল্লাহ মার্কেট, পোড়াভিটা, চালপট্টি, আছদগঞ্জ, চর চাক্তাই, কোরবানিগঞ্জ, বকসিরহাটসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ওইসব এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মজুদ রাখা গুদামগুলোতে নষ্ট হয় কিছু পণ্য। জোয়ারের পানির স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৩ ঘণ্টা প্রতিবছরই বর্ষা ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় নগরীর ভোগ্যপণ্যের গুরুত্বপূর্ণ এসব এলাকা।

খাতুনগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চান জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান। অন্যথায় ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আড়তদার ইলিয়াছ হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ভালো ফল দেখা যাচ্ছে না। নিশ্চয়ই পরিকল্পনার মধ্যে ত্রুটি ছিল। প্রত্যেক গুদাম ও আড়তের সামনের প্রবেশমুখ উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু এতে মালামাল রক্ষা হচ্ছে না। চাক্তাই ও রাজাখালী খালে মুখে স্লুইসগেট দুটি পানি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নয়। যার ফলে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি সহজে নামতে পারে না। এটি নির্মাণ পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকার কারণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে ব্যবসায়ীরা মুক্ত হতে পারছে না। দীর্ঘ সময় তপ্ত আবহাওয়ার পর বর্ষার দেখা মেলে চলতি সপ্তাহে। মৌসুমের প্রথম ভারি বৃষ্টি হয়েছে গেল বুধবার। এর সঙ্গে ছিল পূর্ণিমার জোয়ার। গতকাল টানা ভারি বর্ষণ হয়। এতে জলাবদ্ধতার পুরনো রূপ ফিরে আসে নগরীতে। রাস্তাঘাট, অলি-গলিসহ তলিয়ে যায় নিচু এলাকা। পানি ঢুকে যায় অনেক দোকানপাটেও। এতে ভোগান্তি ও দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী।

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা বলেন, জোয়ারের পানিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডুবেছে চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জ এলাকায়। পানির তীব্রতার কারণে কিছু কিছু গুদামেও পানি প্রবেশ করে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চাক্তাই খালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু চালু করা হয়নি। এর জের ধরে জলমগ্ন হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

নগরীর বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন বলেন, জরাবদ্ধতা নিরসন করতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ভারি বর্ষণ হলে

নগরীর চেহারা পাল্টে যায়। নগরীর বড় অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রশ্ন জাগে এত প্রকল্প হলেও কেন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এই প্রশ্নের কোনো উত্তর থাকে না সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত