শোকাবহ আগস্ট

বৈদেশিক নীতিতে সফল ছিলেন বঙ্গবন্ধু

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য জেল খেটেছেন, জুলুমের শিকার হয়েছেন, ফাঁসির আদেশ মাথা পেতে নিয়েছেন কিন্তু কখনো অধিকার আদায়ের পথে দমে যাননি। তার সুদক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে আমরা অর্জন করেছি আমাদের প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের মতো গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’- এ নীতির ওপর বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি পরিচালিত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, কখনো যুদ্ধ ও বৈরিতা দিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তৎকালীন সময়ের দুই পরাশক্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার বৈরিতা গোটা পৃথিবীকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিল। বিভক্ত পৃথিবীর সামনে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই পরাশক্তির অধীনের জোটে অংশ না নিয়ে যোগ দেন জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে। স্বাধীনতার দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ যোগ দেয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা ও জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা- ইউনেস্কোতে। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাভাবনা ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালান। ১৯৭২ সালের মধ্যে ৬০টিরও বেশি দেশের স্বীকৃতি এবং ১৯৭৫ সালে মর্মান্তিক মৃত্যুর আগে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য সাহায্য-সহযোগিতা ও ঋণ সংগ্রহের চেষ্টা চালান। স্বল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর পরাশক্তিশালী দেশগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা ও ঋণ নিয়ে পাশে এসে দাঁড়ায়, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈদেশিক নীতির অন্যতম বড় সাফল্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং অসহায় বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল। অকৃত্রিম ও উদার বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের এ অবদানকে মনে রেখেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে স্বাক্ষরিত হয় ২৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি। ১২টি অনুচ্ছেদবিশিষ্ট চুক্তিপত্রে বাংলাদেশের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের পক্ষে ইন্দিরা গান্ধী স্বাক্ষর করেন। চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মিত্রবাহিনীর অধীনে দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থান করছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থানকে কেন্দ্র করে স্বাধীন দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে স্বীকৃতি আদায়ের পথে বাধা ও বিভিন্ন গুজব সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন। সেজন্য তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনা করে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চের পূর্বেই ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ নিশ্চিত করেন। ভারতীয় বাহিনীর শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ ছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈদেশিক নীতির অন্যতম বড় বিজয়।