জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন-অর্জন তুলে ধরুন

আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের উন্নয়ন-অর্জন তৃণমূল মানুষের সামনে তুলে ধরতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ প্রদত্ত ‘উন্নয়নশীল দেশের’ মর্যাদা পেয়েছে। এজন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। চলতি বছরের ডিসম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় ৫ হাজার নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে এই বিশেষ বর্ধিত সভা করে আওয়ামী লীগ। বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের নেতাদের নির্দেশনা দিতে এ ধরনের সভা করে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭-এর ২৩ জুন এ ধরনের সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভোটের মালিক। তারা যদি চায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাবে, তাহলে নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। আর আওয়ামী লীগ ভোট পেলেই এটা সম্ভব হবে। তাছাড়া অন্য কেউ এটা করবে না। দেশের কামার, কুমার, তাঁতি, জেলেসহ সব পেশার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবার জন্যই কাজ করব, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এর আগে আর কেউ জনগণের জন্য কাজ করেনি। এই বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং একই সঙ্গে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায় বলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশের ভাগ্যও বদলে গেছে। কতিপয় লোক আছে যারা চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত ও খুনি। আসলে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও জিয়াউর রহমান সবাই খুনি। দেশের মানুষ তাদের হাতে নিরাপদ নয়, দেশও নিরাপদ নয়। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ (আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী) ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ যেসব উন্নয়ন কাজ করেছে তার সবগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিএনপির জন্মই হচ্ছে আজন্ম পাপ। বিএনপির জন্ম অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে, জাতির পিতার হত্যার মধ্য দিয়ে এবং সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। বিএনপির ‘দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ফলে’ দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে একটি ‘চক্রান্ত’ শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, সেই চক্রান্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হত্যা করা হয়। ২১ বছর আমাদের শুধু আহতদের চিকিৎসা ও লাশ টানতে হয়েছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। মানসিক শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি।

সরকারপ্রধান বলেন, একসময় ‘মঙ্গা’ চলত রংপুরে, যার জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো সেখানকার লোকদের। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেখানে কোনো মঙ্গা নেই, নেই দুর্ভিক্ষও। এর কারণ হলো আওয়ামী লীগ, যে দলের প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতির পিতা। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, জনগণের জন্য কাজ করে, মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটায়।

‘গণমানুষের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ দল কেবল জনগণের কাছেই ‘দায়বদ্ধ’। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই। জনগণই হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রভু। জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। জনগণের কল্যাণে কাজ করি। নির্বাচনের সময় জনগণের কাছেই আমরা জবাবদিহি করি- কতটুকু করতে পেরেছি, ভবিষ্যতে আমরা কী করব।

নোবেলজয়ী ড. ইউনুসের প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন কোনো এক বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে দেশে দারিদ্র্য কমেছে। আওয়ামী লীগ ২০০৯-এ সরকার গঠন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে বলেই আজকে আমরা দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোনো বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে যদি দারিদ্র্য কমে, তবে এই ১৮ ভাগ আগে কেন হয়নি। যারা বলে এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য কমেছে, তারা কোন অঙ্কে হিসাব করেন। দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে; কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচি গণমুখী।

তিনি বলেন, জনগণকে দারিদ্র্যমুক্ত করা, জনগণের শিক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেওয়া, তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলেই এই দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। কোনো এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস পায়নি। উচ্চ সুদে যারা কাজ করবে তারা দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না বরং তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে, ঋণের ওপরই জীবনযাপন করতে হয়। কখনো তাদের আত্মহত্যা করতে হয়েছে, কখনো জমিজমা সব বেচতে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, সে কারণে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।

বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে জয়যুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ সময় নেতারা হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানের প্রতি কমিটমেন্ট ব্যক্ত করেন।

‘শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ শীর্ষক এই বিশেষ বর্ধিত সভা সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম। স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। বিশেষ বর্ধিত সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ অগাস্ট নিহত সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।