ভারি বর্ষণে নাকাল চট্টগ্রাম

* আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫০ পরিবার * দেয়াল ধসে ৩ বছরের শিশুর মৃত্যু

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

ভারি বর্ষণের কারণে গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা ফের কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। ভোর থেকে দিনভর জলমগ্ন ছিল নিচু এলাকা। এতে অফিসগামী লোকজন পড়েন সীমাহীন ভোগান্তিতে। বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে। অধিকাংশ স্কুল-কলেজেও ছুটি ছিল। টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে নগরীর কয়েক হাজার পরিবার। বৃষ্টিতে বেড়েছে জলাবদ্ধতা। অসংখ্য সড়কে দিনভর বন্ধ ছিল যানবাহন চলাচল। পানিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্তÍ হয়েছে নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের অন্তত ২৫০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয় মাইকিং। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাকারীদের জন্য জন্য খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র। ভারি বৃষ্টিপাতের সময় গতকাল রোববার চট্টগ্রামের বামাখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নে বাড়ির মাটির দেয়াল ধসে মিজবাহ নামে ৩ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। মিজবাহ সাধনপুর ইউনিয়নের বৈলগাঁও গ্রামের কৃষক রফিউল আলমের ছেলে। নগরীতে টানা ছয় দিন ধরে কখনো থেমে থেমে আবার কখনো ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গেল ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির ধারা গতকাল ষষ্ঠ দিনেও অব্যাহত ছিল। এতে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কমছে না। গতকাল বিকালেও নিচু এলাকা ছিল জলমগ্ন। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। নগরীর বিভিন্ন ফ্লাইওভারগুলোতে জমে যায় পানি। সড়ক ছেড়ে যানবাহনগুলো ফ্লাইওভারে উঠেও আটকে ছিল জলাবদ্ধতার কারণে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি দাস বলেন, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি আরো তিন দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এরপর হয়তো বৃষ্টিপাত কমে আসবে।

নগরীর চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগের শেষ নেই। বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা করছি। আমার এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি। বিশেষ করে কলোনিগুলোর বাসিন্দারা জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে আছেন। পাশাপাশি বেশিরভাগ ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। এখানে আগেও বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হতো। তবে এবার বেশি ডুবেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি না থামলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে। এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি অনেক পরিবারে ডুবে গেছে রান্নার চুলাও। এসব পরিবারে রান্না হচ্ছে না তিন দিন ধরে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো যারা কলোনিতে বাস করছেন তারা জলাবদ্ধতায় বেশি কষ্টে আছেন। সরকারিভাবে এখনো খাবার সহযোগিতা পায়নি বলে এসব পরিবারের অভিযোগ। নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী কাসেম মাহমুদ বলেন, ভারি বর্ষণের কারণে টানা বৃষ্টিতে রিয়াজুদ্দিন বাজার জলমগ্ন হয়েছে একাধিকবার। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সকাল থেকে বৃষ্টিতে রিয়াজুদ্দিন বাজারে পানি বেড়েছে। এখানে কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নষ্ট হয়েছে। অনেক পণ্য স্রোতে ভেসে গেছে। এতে বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়েছে। আমরা আর্থিক সহায়তা কামনা করছি। এদিকে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো ডুবেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন। তার বাড়ির সামনে কোমর সমান পানি জমে যায়। এছাড়া পানি ঢুকেছে চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন পণ্যের গুদামে। পাশাপাশি নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, মাস্টারপোল, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, বহদ্দারহাট, কমার্স কলেজ সংলগ্ন এলাকা, ছোট পুল, বড় পুলসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে এ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি পাহাড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এসব বাসিন্দাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ২৫০ পরিবারকে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আমরা পাহাড়ের নিচ থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিয়েছি। মাইকিং থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিদিন জেলা প্রশাসনের টিম কাজ করছে। গত শনিবার রাতে আমি নিজেই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে ২৫০টি পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছি। তাদের জন্য শুকনো খাবার থেকে শুরু করে প্রতি বেলার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল ও পাহাড়ের নিচের বিভিন্ন বসতি এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।