ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে দুর্ভোগ

সড়কে হাঁটুপানি, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে দুর্ভোগ

রাজধানীসহ সারা দেশে টানা বৃষ্টিতে গতকাল কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েন। ঢাকার অলিগলির রাস্তায় ছোট-বড় খানাখন্দে পানি জমে যায়। এ পরিস্থিতিতে যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি স্বাভাবিক কাজ কর্ম ব্যাহত হয়। আবহাওয়া খারাপ থাকায় রাস্তায় অনেকেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি।

রাজধানীর তেজগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাপ্তানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। লোকজন গণপরিবহনের জন্য সড়কে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকে। যারা ছাতা নিয়ে বের হননি, তারা ভিজতে থাকেন। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছান। এ সুযোগে রিকশা ও সিএনজির ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন চালকরা। কথা হয় কর্মজীবী নারী শিউলি বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে দীর্ঘক্ষণ বাসার নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপর একটি রিকশা পেয়েছি ৩০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা দিয়ে অফিসে পৌঁছেছি। রাস্তা কাটা থাকায় জামাকাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন মাতুয়াইল, রায়েরবাগ ও শনিরআখড়া রোডের যাত্রীরা। ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী কাজলার রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ওই রাস্তার সংস্কার কাজ বন্ধ। এতে মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, এই বৃষ্টি খুবই সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানি জমেছে। রিকশাও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। বাসেও ওঠার মতো অবস্থা নেই, আর অতিরিক্ত ভাড়া গুণে কোনোরকম রিকশা কিংবা সিএনজি অফিসে পৌঁছান তিনি। তবে সকালে বাস না পেয়ে কলেজে যেতে পারেননি সিরাজুল ইসলাম। তিনি তেজগাঁও পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থী। সিরাজুল বলেন, সকালে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। কলেজে যাওয়ার জন্য কামারপাড়া এলাকার বাসা থেকে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। উত্তরা বাসস্ট্যান্ডে যেতেই বৃষ্টিতে পুরো শরীর ভিজে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাস না পেয়ে বাসায় ফিরতে বাধ্য হই।

টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষরা। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা সকালে দোকানপাট খুলতে পারেননি। আবার অনেকে দোকান খুললেও বিক্রি কম হয়। গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। তবে যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই, তাদের বিড়ম্বনা ছিল বেশি। কারণ সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়েছে রিকশাচালকরা। চাকরি টিকিয়ে রাখতে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গণপরিবহন, রিকশা ও সিএনজি অফিসে যান সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে জনজীবন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানীসহ সারা দেশে গুঁড়ি গুঁড়ি ও ভারি বৃষ্টি আরো দুই দিন চলতে পারে। উপকূলীয় এলাকাসহ নদীবন্দরগুলোতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সমুদ্রবন্দরে আগের মতোই ৩ নম্বর এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, আজ ও কাল দেশের আবহাওয়া এমনই থাকবে। তবে কোথাও কোথাও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।

আবহাওয়ার বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হলো। গতকাল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ চট্টগ্রামে ৩২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া খেপুপাড়ায় ৩১৬, বান্দরবানে ২৮৬, হাতিয়ায় ২২১, কুতুবদিয়ায় ১৬৬, সন্দ্বীপ, ফেনী ও কুমিল্লায় ১৫৪, রাঙ্গামাটি ১৪৫, সীতাকুণ্ডে ১২৯, মাদারীপুর ও চাঁদপুরে ১২০, বরিশালে ১০৪, সিলেটে ৮৫, মাইজদীকোর্টে ৭৪, নেত্রকোনায় ৭২ ও নিকলিতে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত