শোকাবহ আগস্ট

বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক ও সাহিত্যিকের চোখে বঙ্গবন্ধু

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা রাষ্ট্রনায়ক, লেখক ও কবি তাদের নিজস্ব আঙ্গিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন। অথচ তাদের এ মূল্যায়ন বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী প্রজন্মকে জানতে দেয়া হয়নি। তারপরও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থেমে থাকেনি। কেন না, ইতিহাস চলমান স্রোতের মতো প্রবহমান। একে আটকানো সম্ভব নয়। তাই তো কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি; কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়।’ তিনি আরো বলেছেন, শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল বন্ধুকে। ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন, আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুমকোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। উইলিবান্ট বলেছেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে, তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষ্য ছিল- ‘শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অভিমত ছিল- ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।’ জেমসলামন্ড বলছেন- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি; বিশ্ববাসী হারিয়েছেন একজন মহান সন্তানকে। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও মতে- ‘বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সাহসী নেতা।’ ইউনেস্কোর মতে- ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি ঐতিহাসিক দলিল। ‘বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছেন, ‘কোনো জেল-জুলুমই কোনোদিন আমাকে টলাতে পারেনি; কিন্তু মানুষের ভালোবাসা আমাকে বিব্রত করে তুলেছে।’ তিনি অন্যত্র বলেছেন- ‘আমি সব ত্যাগ করতে পারি, তোমাদের ভালোবাসা আমি ত্যাগ করতে পারি না।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন- ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর নিষিদ্ধ ছিল ৭ই মার্চের ভাষণ। বেতার-টিভিতে এ ভাষণ প্রচার করা হতো না কখনো। অনেকেই মাইকে এ ভাষণ প্রচার করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন। অথচ সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ১২টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে, ২ হাজার ৫০০ বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ভাষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।’ গৌরী প্রসন্ন মজুমদার তার গানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে গেয়েছেন- ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি- প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রনি বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে গীতিকার হাসান মতিউর রহমানের কালজয়ী গান- ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই। যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই। তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা, আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।’

১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন। সেই কবিতার চারটি চরণ নিম্নরূপ- এই বাংলার আকাশ-বাতাস, সাগর-গিরি ও নদী ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু ফিরিয়া আসিতে যদি’ অপর পঙ্কতি হচ্ছে- ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। দিকে দিকে আজ অশ্রুমালা রক্তগঙ্গা বহমান, তবু নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান।