জোয়ারের পানিতে প্লাবিত চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

অষ্টম দিনের মতো টানা বৃষ্টির কারণে গতকাল সোমবারও নগরীর নিচু এলাকা ছিল পানির নিচে। কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের সময় নগরীতে জলমগ্ন এলাকায় পানিপ্রবাহ বেড়ে যায়। আবার ভাটার সময় পানির প্রবাহে কিছুটা টান পড়ে। মূলত চট্টগ্রাম নগরীর খালগুলোর সাথে কর্ণফুলী নদী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত আছে। এজন্য ভারি বর্ষণে নগরীতে জলমগ্ন এলাকা থেকে দ্রুত পানি সরছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আশপাশের উপজেলার নিচু এলাকায় উঠেছে পানি। হাটহাজারি উপজেলায় জলমগ্ন একটি খালে পড়ে গতকাল মারা গেছেন এক কলেজছাত্রী। জোয়ারের পানির কারণে গতকাল হাটহাজারী উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রেললাইনে পানি উঠেছে। এতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ট্রেন চলাচল। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ফতেয়াবাদ এলাকায় রেললাইন ডুবে গেছে। গতকাল সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম নাজিরহাট ও বিশ্ববিদ্যালয় রেল যোগাযোগ। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় শহর থেকে ছেড়ে এলেও ফতেয়াবাদ রেল স্টেশন-সংলগ্ন রেললাইন ডুবে যাওয়ায় আটকা পড়ে একটি ডেমু ট্রেন। স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাজিরহাট যাওয়ার রেললাইন হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে। রেললাইনের ওপর দিয়ে যাচ্ছে পানির। ফতেয়াবাদ রেলস্টেশনের কাছেই আটকে আছে ডেমু ট্রেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টানা বর্ষণের কারণে ফতেয়াবাদের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। রেললাইনেও পানি জমে যাওয়ায় সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ের কর্মীরা পানি চলাচলের রাস্তা তৈরি করেছেন। আশা করছি ট্রেন চলাচল আবার শুরু হবে।

এদিকে কয়েক দিনের লাগাতার বর্ষণে হাটহাজারী, রাউজান ও বোয়ালখালী উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও অঘোষিত বন্ধ রয়েছে। এসব এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তাঘাট। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে এলাকার মানুষের।

জানা গেছে, হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনী, পূর্ব ফরহাদাবাদ, সেকান্দর পাড়া, পূর্ব ধলই, মাইজপাড়া, পূর্ব এনায়েতপুর, মনোহর পাড়া, উত্তর ছাদেক নগর, গুমানমর্দ্দন বড়ুয়া পাড়া, কাটাখালীর কুল, মাস্টার পাড়া, রুদ্রপুর, কাজিরখীল, মোহাম্মদপুর, মীরেরখীল, কদলবাড়ী, মোজাফফরপুর, ভাগিরঘোনা, রহিমপুর, ইছাপুর, পূর্ব মেখল, ভবানীপুর, উত্তর মার্দাশা, মাদারীপোল, সাইনবোর্ড, খলিপারঘোনা, বাথুয়া, কুয়াইশ, বুড়িশ্চর, মধ্যম মার্দাসা গড়দুয়ারা, লোহারপোল, শিকারপুর, খন্দকিয়া, নাঙ্গলমোড়া, কুমারীকুল, সিকদারপাড়া, চারিয়া (আংশিক), মধুরঘোনা, আনন্দ বাজার, দক্ষিণ মেখল, পূর্ব ফতেপুর, মেহেরনেগা, মাছুয়াঘোনা প্রভৃতি এলাকার ৪০টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ওপরের অংশ থেকে ঢলের পানি কমলেও নিচু এলাকার বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে অবনতি হচ্ছে। দক্ষিণ হাটহাজারীর শিকারপুর ও বুড়িশ্চর এলাকার কৃষ্ণখালী ও কুয়াইশ খাল দীর্ঘদিন সংস্কার ও খনন না করায় এই দুই ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়ক ও রাস্তাঘাট, এমনকি বসতঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।

রাউজান উপজেলার উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পূর্বগুজরা, বিনাজুরী ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে তীব্র স্রোতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কোনো কোনো রাস্তা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। হালদা ও কর্ণফুলীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মানুষের বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাট-বাজারের দোকানগুলো হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। অনেকের ঘরে চলছে না রান্না। গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে।

বোয়ালখালী উপজেলায় পানিতে কালুরঘাট ফেরির অ্যাপ্রোচ সড়ক, পন্টুন ও বেইলি সেতু ডুবে থাকায় পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ সময় সেতুর ওপর দিয়ে পায়ে হাঁটার সুযোগ পাওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে লোকজন। সকাল থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি ঢুকে পড়ায় সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের।

এদিকে কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় নালায় পড়ে নিপা পালিত (২০) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার ইসলামীহাটের চসিক ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিপা পালিত ওই এলাকার উত্তম পালিতের মেয়ে। তিনি হাটহাজারী কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

নিপা পালিতের ফুফাত ভাই জয় ঘোষ জানান, নিপা দীর্ঘদিন ধরে মৃগী রোগে ভুগছিল। গতকাল ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় হঠাৎ মাথা ঘুরে বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা নালায় পড়ে গেলে আর ওপরে উঠতে পারেনি। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।