ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টানা বর্ষণে স্থবির পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

* আড়তগুলো ক্রেতাশূন্য * কয়েকশ’ কোটি টাকার ক্ষতি * বহির্নোঙরে চলছে না লাইটারেজ জাহাজ
টানা বর্ষণে স্থবির পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ভারি বর্ষণে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্যের এই বাজারটি। ক্রেতারা আসতে পারছেন না আড়তে। আবার আড়ত মালিকদেরও বিক্রি বন্ধ। এতে আড়ত গুদামে বন্ধ হয়ে গেছে পাইকারি ব্যবসা। বর্ষণের কারণে কয়েকশ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে টানা চার দিন। এতে বড় জাহাজ থেকে খোলা পণ্য খালাস না হওয়ায় খাতুনগঞ্জে পণ্য সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষণের বিষয় আঁচ করতে পেরে এবার ব্যবসায়ীরা আগেভাগে সতর্ক ছিলেন। আড়ত থেকে দ্রুত পণ্য পানির লেভেল থেকে উপরে তুলে নেন। এজন্য ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।

ভারি বর্ষণ হলেই খাতুনগঞ্জের আড়তগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এটা অনেক দিনের পুরোনো চিত্র। জলাবদ্ধতা প্রকল্প হাতে নেয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়। জোয়ারের পানির পরিমাণ বেশি না হলে খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। কিন্তু টানা ভারি বর্ষণ হলে সয়লাব হয়ে যায় খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিচু এলাকার অনেকগুলো আড়ত আছে, যেখান থেকে পণ্য তুলে রাখার সুযোগ নেই। সেই সব আড়তগুলোতে পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়েছে পণ্য। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কমেছে সব ধরনের বেচাকেনা। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত ট্রাকে ভোগ্যপণ্য আসত। শ্রমিকরাও ট্রাক থেকে মালামাল নামাতে গিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন। কিন্তু এখন একেবারেই অলস সময় পার করছেন দিনমজুর ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়িক লেনদেনের পরিমাণও কমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। ওই এলাকার ব্যাংক পাড়াও সুনসান নিরবতায় সময় পার করছে।

চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে বেচাকেনা একেবারেই নেই। নগরী ও তার আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা তেমন বাজারে আসেনি। চাল, ডাল, লবণ, মরিচ, মশলা, ময়দা, ভোজ্যতেল ও আটাসহ নানা নিত্যপণ্যের মজুত এখনো যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও বৃষ্টির কারণে বাজার হয়ে পড়েছে ক্রেতাশূন্য। এ অবস্থায় গুদামজাত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনান্য নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরাও লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে আমির মার্কেট, হামিদউল্লাহ মার্কেট, মোল্লা বাণিজ্য বিতান এলাকা, আছাদগঞ্জ, রাজাখালী রোড়, চাউলপট্টি, ময়দার মিল, খালের পাড় এলাকার বেশকিছু গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কিছু ব্যবসায়ীর গুদামের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বৃষ্টি হলেই ক্রেতাদের আনগোনা কমে যায়। এবার টানা বৃষ্টি হওয়ায় ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে খাতুনগঞ্জ। গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে পেঁয়াজ রসুন বিক্রিও কমে গেছে। গ্রামগঞ্জ থেকে কোন ক্রেতা আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে পচনশীল পণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, আদা, রসুন গুদামে নষ্ট হয়ে যাবে। এতে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের বড় লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, বৃষ্টির কারণে বিক্রি কম হয়। কিন্তু টানা ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকার ঘটনা তেমন হয় না। এবার টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় তাই হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও নগরের খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে আসতে পারছেন না। আমরাও পণ্য নিয়ে বসে আছি, অথচ বিক্রি করতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে অনেক পচনশীল পণ্য নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ব্যবসায়িক সরবরাহ চেইন ভেঙে যাবে। এতে বাজার অস্থির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ক্রেতাদের ভোগান্তিও বাড়বে।

খাতুনগঞ্জের আড়তদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে ঘণ্টায় অন্তত ৮ থেকে ১০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক ঢোকে। এসব ট্রাকগুলো কিছু আসে বাংলাবাজারসহ ১৬ ঘাট থেকে। লাইটারেজ জাহাজ থেকে খালাস করা পণ্য এই ঘাটে রাখা হয়। সেখান থেকে ট্রাকে করে তা আড়ত কিংবা পণ্য গুদামে রাখা হয়। আবহাওয়ার ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত ঘোষণা থাকায় লাইটারেজ জাহাজগুলো খালাস কার্যক্রম থেকে বিরত আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত