ভোট নিয়ে দ্বিধায় জাপা

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান। এ ভোটের তফসিলে সময় ঘোষণার বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি (জাপা) নেতারা বলেছেন, ভোটে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। এ বিষয়ে আরো পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেবে জাপা।

এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মো. মুজিবুল হক বলেন, জাতীয় পার্টি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। সময় এলে, অবস্থা বুঝে, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে কি না বা নির্বাচন কীভাবে করবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, এক মাস থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে গত মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এ কারণে তার বক্তব্যে পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাচন এলেই রওশন সক্রিয় হন। তিনি প্রকাশ্যে বর্তমান সরকারকে সমর্থন করেছেন। একই সঙ্গে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও আগাম ঘোষণা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন রওশনপন্থি নেতা বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে এত দিন ছিলাম। এখনো বের হয়ে যাইনি। সবাই চাচ্ছে সরকারের সঙ্গে থাকতে। আইন অনুযায়ী ইসি যখন ভোট করবে, তখন আমরা ভোটে যাব। এদিকে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা) দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদপন্থিদের সঙ্গে বর্তমান এমপিরা ভোটে যেতে চান। অন্যদিকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরপন্থিরা রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গেই থাকতে চান সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) বেশির ভাগ সংসদ সদস্য। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বসহ একটি অংশ সরকারের সঙ্গে এবার গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহী নয়। তারা রাজনীতিতে একটা ‘স্বতন্ত্র’ অবস্থান নেওয়ার পক্ষে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে অবস্থান স্পষ্ট করতে না পারায় এ অংশটি দ্বিধাগ্রস্ত। জানা যায়, একটি অংশের সরকারের সঙ্গে থাকার, অন্য অংশটির স্বতন্ত্র অবস্থান নেওয়ার তৎপরতা দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। তারা এখনো বুঝতে পারছেন না, আগামী নির্বাচনে জাপার ভূমিকা কী হবে। কারণ, প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে দলের অভ্যন্তরে দুটি ধারা স্পষ্ট। একটি ধারা দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে, অন্যটি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে ঘিরে। যে অংশটি সরকারের সঙ্গে থাকতে চায়, তারা গোপনে রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জানা যায়, আগামী সংসদ ভোট নিয়ে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিভিন্ন সময় কিছুটা সরকারবিরোধী কথা বললেও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলে আসছেন। এ কারণে জাপা আগামী নির্বাচনে জোট বেঁধে নির্বাচন করবে, না এককভাবে নির্বাচন করবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিবে জাপা। জোটের বিষয়ে কৌঁসুলী অবস্থান নিয়েছে তারা। এর ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের সঙ্গে দরকষা-কষি করার সুযোগ পাচ্ছে জাপা। সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাপা কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, সে বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেবে না দলটি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে দলটি আরো কিছুদিন অপেক্ষা করবে। দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রায় সবাই সরকারের পক্ষে থাকার কথা বলছেন। অন্যদিকে বেশির ভাগ প্রেসিডিয়াম সদস্য সরকারের সঙ্গে থাকার বিরোধিতা করেছেন।