জাতীয় সংসদ নির্বাচন

পর্যবেক্ষক সংস্থা যাচাইয়ে কঠোর নির্বাচন কমিশন

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপ অনুযায়ী সব কাজ সময়মতো শেষ করছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। আর এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় ৬৮টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ তালিকা কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করছে ইসি।

সূত্র জানায়, নভেম্বরে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ভোট করতে চায় ইসি। ভোটের আগে নতুন দল নিবন্ধন দেয়া হয়েছে, চূড়ান্ত হয়েছে সীমানা। এবার চূড়ান্ত করতে চলছে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা। এই তালিকা নিয়ে যাতে কোনো সমালোচনার সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে ইসি।

ইসির সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক জানান, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদনগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত নীতিমালার ৪(৪)(ক) অনুচ্ছেদের আলোকে ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কারো কোনো দাবি অথবা আপত্তি অথবা অভিযোগ থাকলে তা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আগারগাঁও, ঢাকা বরাবর লিখিতভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

কারো বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি অথবা অভিযোগ থাকলে উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর উল্লেখ করে ছয় সেট আপত্তি দাখিল করতে হবে। আপত্তির শুনানি শেষে তা গ্রহণ বা বাতিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

নির্বাচন কমিশন ৫ বছরের জন্য ভোট পর্যবেক্ষণে সংস্থাগুলোকে নিবন্ধন দিয়ে থাকে। এবার নিবন্ধন নিতে আবেদন আহ্বান করার পর ১৯৯টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৬৮টিকে বাছাইয়ে রেখে আপত্তি আহ্বান করল ইসি। আপত্তি শুনানির পর চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন দেওয়া হবে।

২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি।

যেসব সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য তালিকায় রেখেছে ইসি-

মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, সেবা সোশ্যাল ফাউন্ডেশন, অগ্রদূত সংস্থা, অ্যাক্টিভিটি ফর রিফরমেশন অব বেসিক নিডস, হাইলাইট ফাউন্ডেশন, মুভ ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ, ডিজঅ্যাবিলিটি ইন কোজিশন অ্যাক্টিভিটিস, আজমপুর শ্রমজীবী উন্নয়ন সংস্থা, আব্দুল মমেন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, এসডাপ, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন, লুৎফর রহমান ভূঁইয়া ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, যুব উন্নয়ন সংস্থা, শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র, বঞ্চিতা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, কেরানীগঞ্জ হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, এসকে কল্যাণী ফাউন্ডেশন, সোসাইটি ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অব রুরাল পিপল, সেতু রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, সোসাইটি ফর ট্রেনিং অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন, রুরাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট, ডেভেলপমেন্ট হেল্পিং কি, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশন, বাঁচতে শেখা, ডপস ফাউন্ডেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ভলান্টারি অরগানাইজেশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট, ক্রিয়েটিভ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, জেন্ডার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সোসাইটি, ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন অ্যান্ড পিস, বেসিক, হিউম্যান রাইটস ভয়েস, সমাজ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রাজবাড়ি উন্নয়ন সংস্থা, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার, গরিব উন্নয়ন সংস্থা, সমাহার, সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, হাফেজ্জি চ্যারিটেবল সোসাইটি ফর বাংলাদেশ, ডেভেলপমেন্ট অব মহিলা সোসাইটি, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, রূপনগর শিক্ষা স্বাস্থ্য সহায়তা ফাউন্ডেশন, সোশ্যাল ইকুয়ালিটি ফর ইফেক্টিভ ডেভেলপমেন্ট, ইন্টিগ্রেটেড সোসাইটি ফর রেগস অব হোপ, সমন্বিত নারী উন্নয়ন সংস্থা, পল্লী একতা উন্নয়ন সংস্থা, সোসাইটি ফর হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড লাস্টিং ডেভেলপমেন্ট, সেঁজোতি হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, এসো জাতি গড়ি, ওয়েসভা, সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যান্ড কো অপারেশন অরগানাইজেশন, ফোরাম ফোর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, প্রকাশ গণকেন্দ্র, রুরাল অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, সার্ভিসেস ফর ইকুইটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, হিউম্যান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি হিডস, রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি ফর বাংলাদেশ, গ্রাম উন্নয়ন কর্ম, ইকো কনসার্ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কমিশন, গণউন্নয়ন কেন্দ্র ও এসো বাঁচতে শিখি (এবাস)। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- মিরপুরের রূপনগর শিক্ষা সহায়তা ফাউন্ডেশন : এটি তালিকাভুক্ত হলেও এর কোনো অফিস নেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এইচ এম আব্দুর রাজ্জাক নিজের বাসাকেই অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন। ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশের অফিস মিরপুরের টোলারবাগে। সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্চিতা তালুকদারের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য জানা যায়নি। তবে তার বড় ছেলে কল্যাণপুর ও মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় যুবলীগের সর্বোচ্চ পদধারী নেতা।

তালিকাভুক্ত বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশনের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে পুরানা পল্টনের বায়তুল খায়ের টাওয়ার। তবে ১২ তলা ভবনটিতে এই সংস্থার কোনো কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তালিকায় থাকা হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর মোহাম্মদী হাউজিং এলাকায় গেলে সেখানে ‘যানজাবিল ফুড’ নামের একটি দোকান পাওয়া যায়। ইন্টিগ্রেটেড সোসাইটি ফর রেইজ অব হোপ (রিশ)-এর অফিস দূরে থাক, কোনো সাইনবোর্ডও নেই। ইসিতে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আদাবরের শেখেরটেক গিয়ে ক্রিয়েটিভ সার্ভিসেস লিমিটেড নামে অন্য একটি অফিস পাওয়া গেছে। সেখানে রিশের কোনো নামগন্ধও পাওয়া যায়নি। রিশের সভাপতি রিয়াদ সরকার ময়মনসিংহে থাকেন। এছাড়া আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে অভিযোগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।