নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে ইসিতে স্মারকলিপি

বহুমুখী চাপে বিএনপি

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে আওয়ামী যুবলীগ। এ বিষয়টি নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ফলে বিএনপি এখন নিবন্ধন হারানোসহ বহুমুখী চাপে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল, ভোটের আগে দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি করার ফলে দলটি চাপের মুখে পড়বে। তবে ইসি চাইলেও সহজে বিএনপির নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে না। আইনের বাহিরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই, ইসিকে যা কিছু করতে হবে তাদের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী করতে হবে।

সুত্র জানায়, বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে এর আগেও আভিযোগ এসেছিল ইসিতে। তখন এত আলোচনা ছিল না। তবে এবার ভোটের আগে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন থেকে এ ধরনের দাবি আসায় নতুন করে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। দাবির বিষয়টি নিয়ে ইসি পর্যালোচনা করবে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, কানাডার ফেডারেল কোর্ট পর পর ৫ বার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারেক রহমান একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এমন অবস্থায় দলের নিবন্ধন বাতিলের আবেদন আসায় কিছুটা চাপে পড়েছে দলটি। শেষ পর্যন্ত তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়তো করা হবে না, তবে ভোটের আগে এমন আলোচনা আসায় অস্বস্তিতে পড়বে দলটি।

বিএনপির নিবন্ধন বাতিল বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেছেন, যে কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে। আরপিও ৯০ অনুচ্ছেদে কিছু শর্ত আছে, সে শর্ত পূরুণ না করলে যে কোনো দলের নিবন্ধন ইসি বাতিল করতে পারে। তবে তাদের অত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের কাছে বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে স্মারকলিপি দেয়। স্মারকলিপি জমা দিয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে এ দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তার উত্তরসূরী তারেক রহমান ও তার মায়ের নেতৃত্বে যে সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে তারা বাংলাদেশে হরতাল ও অবরোধের নামে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে তখন তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে আবারো সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে। তারেক রহমানের নির্দেশেই নৈরাজ্য হচ্ছে, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায় বিএনপি। সহিংসতা করে বিদেশিদের বার্তা দিতে চায় বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র। জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের পাশাপাশি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, তারেক রহমান একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাই তাকে ফিরিয়ে আনতে মহামান্য আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটা কার্যকর করা উচিত। বিএনপির রাজনীতি যত দিন থাকবে তত দিন তারা দেশ ধ্বংসের চক্রান্ত করবে। তারা হত্যা, পেট্রোল বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতেই থাকবে। তাই দেশের যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ এবং সর্বস্তরের জনগণ মনে করে এই সংগঠনের বিচরণ বেশি দিন বাংলার মাটিতে থাকা উচিত নয়। তাই আমরা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের দাবি করছি। সেই সঙ্গে বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছি।

অন্যদিকে একই দিন দুপুরে সচিবালয়ে যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আরেকটি স্মারকলিপি তুলে দেন।

স্মারক লিপিতে বলা হয়েছে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। কানাডার ফেডারেল কোর্ট পর পর ৫ বার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর) মামলায়ও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নানা অপতৎপরতার কারণেই আন্তর্জাতিক মহল বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আজও বিএনপি পূর্বের ন্যায় মানুষ হত্যা করছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে এবং দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করে চলেছে। অবিলম্বে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপির নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনীতি নিষিদ্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের স্মারকলিপি পেয়েছি। আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে করা দরকার, সেটা আমরা করব। আমরা সব ঘটনা জানি। এরইমধ্যে তারেক জিয়া ও তার স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে দণ্ডিত। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের যা যা করার, আমরা তা করব। আমার মনে হয় সবগুলো যৌক্তিক দাবি। আমরা এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেব।

গর আগে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ ভোটের আগে তরীকত ফেডারেশনের সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বিএনপির নিবন্ধন বাতিল চেয়েছিলো। তরীকত ফেডারেশনের এই সাংসদ বলেছিলেন, কানাডার ফেডারেল আদালতে বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে আখ্যায়িত করায় বাংলাদেশেও বিচারের মাধ্যমে দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।

মাইজভান্ডারি বলেছিলেন, জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যেমন তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে; বিএনপিরও নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। তাদের এক নেতা বলছেন, তারা গণ-অভ্যুত্থান চান। তারা আসলে কী চান? আগামী নির্বাচনে তারা যাতে একই কাজ করতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে।