ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শোকাবহ আগস্ট

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০ লাখ মানুষের জীবন উৎসর্গ এবং আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সত্যিকার অর্থে বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্ববোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি। এ ভাষণের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কাব্যিক গুণ- শব্দশৈলী ও বাক্যবিন্যাস। তার পুরো ভাষণটি হয়ে ওঠে গীতিময়। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও হৃদয় উৎসারিত। রেসকোর্স ময়দানে দেয়া স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতিদীর্ঘ এ ভাষণটি ছিল বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ, সম্মোহনী, তেজস্বিতা, বাগ্মীতা, দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা, সুদুরপ্রসারী চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী। এ ভাষণ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনগণকে এক পতাকাতলে সমবেত করে। এ ভাষণ ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

স্বাধীনতা বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তীতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকণ্ঠে ১৮ মিনিটের কিছু কম সময় যে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন তা ছিল মূলত বাঙালির স্বাধীনতার ডাক। ঐতিহাসিক ভাষণের সেই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

সঙ্গত কারণে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের প্রেরণার চিরন্তন উৎস। পৃথিবীতে অন্য কোনো ভাষণ এতবার উচ্চারিত হয়নি। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার ওই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্র কঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত শক্তির উৎস ছিল এই ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী এক মহাকাব্য। এ ভাষণে তার তেজস্বিতা ও সম্মোহনী ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। এ ভাষণ ছিল বহুমাত্রিকতায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বমানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তে এটিই স্বীকৃত হয়েছে। গণতন্ত্র, উচ্চ মানবিকতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আদর্শ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম, জাতিভেদ-বৈষম্য ও জাতি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতার মুক্তির সংগ্রামে যুগে যুগে এ ভাষণ অনুপ্রেরণা জোগাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত