ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানায় সিটিটিসির অভিযান

নারী-পুরুষসহ ১০ জন আটক বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার

নারী-পুরুষসহ ১০ জন আটক বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পাহাড়ি নির্জন এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নারী-পুরুষসহ ১০ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের নির্জন পাহাড়ি এলাকা পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামের ওই বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণ নলতা গ্রামের ওমর আলীর পুত্র শরীফুল ইসলাম (৪০), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানা কালনা গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র খায়রল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘলা (১৭), সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের পুত্র রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের শাপলা বেগম (২২), নাটোর সদরের চাঁদপুর গ্রামের সাইদুল ইসলামের মেয়ে মাইশা ইসলাম (২০), বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দি থানা নিজবলাই গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের আমিনা বেগম (৪০) ও তার মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০)। আবিদা (১২ মাস), জুবেদা (১৮ মাস) এবং হজাইফা নামের ৬ বছরের শিশু রয়েছে। ঘটনাস্থলে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ব্রিফিংয়ে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, তাদের কাছে তথ্য ছিল ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা উগ্রবাদের দীক্ষা নিয়ে ব্যাপকভাবে মানুষকে সংগঠিত করছে। তাদের মৌলভীবাজারে কুলাউড়ায় কোথায় তারা আস্তানা গড়েছে।

গত ৭ দিন ধরে এই আস্তানার সন্ধান করছিল তাদের গোয়েন্দা ইউনিট। এবং গত শুক্রবার তারা ফাইনালি এ আস্তানার সন্ধান পান। তিনি আরো জানান, এর আগে ঢাকা থেকে তারা একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন, যিনি জঙ্গি আস্তানা থেকে পরিবারকে আনার জন্য গিয়েছিল। তার বর্ণনা মতে এবং এখানে সহকারী পুলিশ কমিশনার শফিকসহ ইন্টেলিজেন্স টিম এই আস্তানা সম্পর্কে তথ্যের শতভাগ নিশ্চত হন। এবং রাত থেকে সিটিটিসির সোয়াত টিম ও মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয় এবং সকাল সাড়ে ৬টায় ওই আস্তানায় সিটিটিসির সোয়াট টিমের সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি আরো জানান, প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে তারা কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন হননি, বিনা বলপ্রয়োগে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।

আস্তানা থেকে চারজন পুরুষ ছয়জন নারীকে আটক করে নিয়ে আসা হয় এবং সঙ্গীয় তিন শিশুকে হেফাজতে নেয়া হয়। তিনি আরো জানান, এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিল সাইড’। প্রেস ব্রিফিং কাউন্টার টেরিজম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জান জানান, জঙ্গি আস্তানা থেকে প্রায় ৩ কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, কমান্ডো বুট, কয়েক বস্তা জিহাদি বইসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণসামগ্রী, ছুরি-রামদাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র এবং নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের প্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ খাদ্য দ্রব্যসহ তাদের প্রয়োজনী যা যা দরকার ছিল সব কিছুই তারা মজুদ করেছিল। তারা ওই আস্তানা থেকে বিপুল সংখ্যাক আলামত পেয়েছেন, যা পরবর্তী কোনো অপারেশনে তা সহায়ক হবে।

তিনি আরো জানান, এই সংগঠনের মূল ব্যক্তির নাম তারা পেয়েছেন এবং খুব শিগগিরই তাকে আটক করা সম্ভব হবে। অভিযান শেষে আস্তানাটি স্থানীয় পুলিশ সুপারের জিম্মায় দিয়ে অভিযান শেষ করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন জয়েন্ট কমিশনার কামরুজ্জামান, সিটিটিসি কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের নাজমুল ইসলাম, সোয়াট কামান্ডার এডিসি জাহিদ, মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান পিপিএম ও কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালেক। উল্লেখ্য, এর আগে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পৃথক দুটি স্থান শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত