বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে ময়মনসিংহে গঠন করা হয়েছিল ‘জাতীয় মুক্তি বাহিনী’

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শাহ মোহাম্মদ রনি

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ময়মনসিংহে গঠন করা হয়েছিল ‘জাতীয় মুক্তি বাহিনী’। ৩ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে বাছাই করা ৭ হাজার যুবক ও ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত হয় ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী বিশেষ এই বাহিনী। দীর্ঘ ১৯ মাস ভারতে অবস্থান করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায় বীরত্বগাঁথা এ বাহিনী। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রথম ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ময়মনসিংহ থেকেই। মানুষ এখনো এই বাহিনীকে চিনে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ নামে। নানান কারণে এখনো অবহেলিত বিশেষ এই বাহিনীর বীর যোদ্ধা ও তাদের পরিবার। পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন ‘প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ’র বহু সদস্য। বীর যোদ্ধা ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা এবং প্রাপ্য সম্মান চান। অন্যদিকে বহু আগে সংগঠনের কয়েক সদস্যের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সরকারের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন হাজার হাজার পরিবার। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ’র পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে দুইবার সাক্ষাৎ স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে কলঙ্কময় ১৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময় নিয়ে গতকাল রোববার কথা হয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন আসনের এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সাথে। তারা সবাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। জানা যায়, এরশাদ সরকারের শেষ সময়ে ১৯৯০ সালে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীসহ অন্যদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। পরে প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডে জড়ানোর কারণে শেখ হাসিনার সাথে আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার ঘটনায় কাছের সহযোগীদের সাথেও তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে ‘জাতীয় মুক্তি বাহিনী’ বিলুপ্ত ঘোষণা করে গঠন করা হয় ‘প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ’। বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী বীর যোদ্ধাদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল তাদের। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে গর্জে উঠা এ বাহিনীর অনেক সদস্যের এখন পর্যন্ত নাম নেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে ‘প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ’ সদস্যদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন সেল খোলা হয়। এখন পর্যন্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৪ হাজারের বেশি বীর যোদ্ধা। পর্যায়ক্রমে অনেকেই ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। জটিলতা নিরসন হলেই ‘প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ’ সদস্যরা সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পাবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ময়মনসিংহে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। ইতিহাসের কলঙ্কময় এই হত্যাকাণ্ডের খবর পৌঁছার পরই ময়মনসিংহ শহর নিস্তব্ধ হয়। হতভম্ব হন সর্বস্তরের মানুষ। অঘোষিত কারফিউ জারি থাকায় সৃষ্টি হয় ভূতুড়ে পরিবেশ। নামানো হয় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ও পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা। গ্রেপ্তার হন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশত নেতা। তাদের অনেককেই আটকাদেশ (ডিটেনশন) দিয়ে পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়ানো হয়। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সবাই মুক্তি পান। একই সময় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। পরে তাকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

জাতীয় মুক্তি বাহিনী’র অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বর্তমানে প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর দেলোয়ার হোসেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ময়মনসিংহের মাটি থেকে। গর্জে উঠেছিল এ অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৩ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সমন্বয়ে বাছাই করা ৭ হাজার যুবক ও ব্যক্তিকে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল ‘জাতীয় মুক্তি বাহিনী’। বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কাদের সিদ্দিকী সুযোগ খুঁজতে থাকেন। সাহসী কয়েকজন মুুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে নভেম্বর মাসের শুরুতে তিনি ময়মনসিংহ শহরে আসেন। বৈঠক করেন রেবতী মোহন চক্রবর্তী ও সুধীর চন্দ্র দাসসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে। পরে হালুয়াঘাট সীমান্তের গোবড়াকুড়ায় আমাদের সাথে বৈঠক করেন। কাদের সিদ্দিকী হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ি ও ঝিনাইগাতী সীমান্তে অবস্থানের পর আমাদের নিয়ে ওপারে চলে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি দুইবার ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠক করে ফিরে আসেন। তৃতীয় বার বৈঠকের পর ভারত সরকারের সহযোগিতায় শুরু হয় জাতীয় মুক্তি বাহিনী’র কর্মকাণ্ড।

জানা যায়, তিনটি সেক্টরে বিভক্ত ছিল ‘জাতীয় মুক্তি বাহিনী’। টাঙ্গাইলের আনোয়ারুল হক সেলিম তালুকদার নেত্রকোনা সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের ভবানীপুরে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের মীর দেলোয়ার হোসেন ময়মনসিংহ সীমান্তের ওপারে মেঘালয়ের ডুমনি কুড়ায় এবং নেত্রকোনার কলমাকান্দার সুকুমার সরকার নেত্রকোনা সীমান্তের মেঘালয়ের মহাদেওয়ে অবস্থান করে তিনটি সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। হালুয়াঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কবিরুল ইসলাম বেগ হেডকোয়ার্টার কমান্ডারসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। আনোয়ারুল হক সেলিম তালুকদার জাতীয় মুক্তি বাহিনী’র সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। এখন তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি। তৎকালীন সময়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুর্গাপুর-কলমাকান্দা আসনের বর্তমান সংসদ

সদস্য মানু মজুমদার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। মীর দেলোয়ার হোসেন

সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি ময়মনসিংহ বিভাগে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মীর দেলোয়ার হোসেন জানান, সুনামগঞ্জ থেকে কুড়িগ্রাম জেলার ওপারে দেড় শতাধিক অস্থায়ী ক্যাম্প করে আমরা দীর্ঘ ১৯ মাস বিডিআরের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাই। প্রতিদিনই দীর্ঘ ৩২২ কিলোমিটার সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে বিডিআরের সাথে আমাদের যুদ্ধের ঘটনা ঘটত। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের মে মাস পর্যন্ত আমরা ভারতে অবস্থান করে ৩২২ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে রাখি। ১৯ মাসের যুদ্ধে আমাদের বাহিনীর ২ শতাধিক সদস্য শহীদ হন। ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনার পর ১৯৭৭ সালে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মাধ্যমে জাতীয় মুক্তি বাহিনী’র সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। অনেকেই পালিয়ে ভারত সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, আব্দুল কাদের সিদ্দিকীসহ আমরা ২২ জন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিই। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসন না করে ৫ শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক রাখা হয়। সামরিক আদালত গঠন করে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দীসহ কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। তৎকালীন সেনা প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বিশ্বজিৎ নন্দীর ফাঁসির দণ্ড মওকুফ করেন।

প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ’র নেতা মুক্তিযোদ্ধা স্বপন চন্দ দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ’কে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসেছিলাম বলেই আমরা মহান এ নেতার ডাকে সাড়া দিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। দেশ স্বাধীনের সাড়ে ৩ বছরের মাথায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি সপরিবারে নৃশংসভাবে শহীদ হন। ইতিহাসের জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে আমরা আবারও যুদ্ধে নামি। সংগঠনের অন্যতম নেতা পরিমল চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যুদ্ধে যুদ্ধে দীর্ঘ ১৯ মাস কাটিয়ে দেই। আমরা প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদের সদস্যরা প্রাপ্য সম্মানটুকু নিয়ে বাঁচতে চাই। যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তারা তো রাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার দাবি রাখেন।

‘প্রতিরোধযোদ্ধা সন্তান পরিষদ’র মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মো. বাকি বিল্লাহ লিঠু জানান, ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছিলেন বলেই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘ ১৯ মাস যুদ্ধ করেছেন। সেই সব বীর যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এখনো অবহেলিত। অনেক পরিবারেই রয়েছে চরম অর্থ সঙ্কট। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের। সরকার যদি এই সব যোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা এবং প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয় তাহলে পরিবারগুলো ভালোভাবে দিন কাটাতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিক্রিয়া

সাবেক ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বারবার কারাবরণ ও জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়ে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মহান এ নেতা। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ফুলবাড়ীয়া আসনের এমপি আলহাজ অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন জানান, কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানো অসম্ভব। বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। ঈশ্বরগঞ্জ আসনের এমপি ফখরুল ইমাম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। ভালুকা আসনের এমপি আলহাজ কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু জানান, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে এ খবর শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম। স্তব্ধ হয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। তখন আমি কিশোর।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ফুলপুর-তারাকান্দা আসনের এমপি শরীফ আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাংলাদেশের স্থপতি মহান এ নেতাকে জাতি যুগ-যুগান্তর মনে রাখবে। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু জানান, বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ উল্লেখযোগ্য নাম। আমরা এখন সারা বিশ্বে বীরের জাতি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, সেদিন ভোরের ট্রেনে বাড়ি যাওয়ার জন্য গফরগাঁওয়ের কাওরাইদ স্টেশনে নামি। রেডিও’র খবরে জানতে পারি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ভেবেছিলাম প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমার একটি অস্ত্র প্রয়োজন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বলেন, ১৫ আগস্ট সকালে রেডিওতে মেজর শরিফুল ইসলাম ডালিমের ঘোষণা বিশ্বাস করতে পারি নাই। নির্বাক নিস্তব্ধ হয়ে থমকে যাই। আকাশ বাণীর সকাল ৮টার খবরে বিস্তারিত জানতে পারি। ততক্ষণে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম-গ্রামান্তরে। ময়মনসিংহ শহরে বিডিআর-পুলিশের যৌথ টহল। অঘোষিত কারফিউ চলে তিন দিন। আত্মগোপনে যান যুবক ও মধ্য বয়সি হাজার হাজার মানুষ। সূত্র জানায়, ইতিহাসের কলঙ্কময় ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পরই বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক আহমেদ ময়মনসিংহ শহরে আসেন। আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠের বিপরীতে মামার বাড়িতে অবস্থান করেন। ওই সময় তিনি ময়মনসিংহ শহরের অনেকের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করেন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে। ফ্রিডম পার্টি গঠনের পর বৃহত্তর ময়মনসিংহের রাজনীতি দেখভাল করতেন খুনি ফারুক।