ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শ্রদ্ধা

দিনভর ছিল শোকার্ত মানুষের ঢল
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের শ্রদ্ধা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল এই মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর পাশাপাশি দিনভর বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান শোকার্ত সাধারণ মানুষ।

রাষ্ট্রপতি সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে সকাল ৬টা ২৮ মিনিটে রাষ্ট্রপতি সেখানে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয়ই সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তারা জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাসহ তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত করেন। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতির প্রতি এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে এবং বিউগলে করুন সুর বাজানো হয়। এ সময় ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। ধানমন্ডি থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান, যেখানে তার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল এবং ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ফুলের পাঁপড়ি ছড়িয়ে দেন।

শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। দিনটি সারাদেশে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তার তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ তার তিন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের ব্রাশফায়ারে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ওই সময় বিদেশে থাকায় হত্যাকাণ্ড থেকে প্রাণে বেঁচে যান।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণের পর স্পিকার সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, হুইপসহ সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় জমায়েত হতে থাকেন। দলের সভাপতি হিসেবেও শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।

এছাড়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও এস এম কামাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত বাড়ির ভেতরে যান। সেখানে ঘুরে ঘুরে তার পিতার স্মৃতিচিহ্ন পরিদর্শন করেন এবং সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় কাটান তিনি। সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক।

হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালো ব্যাজ পরিধান করে নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সকলেই পরম শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করেন। সকাল সাতটা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ত্যাগ করার পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে প্রধানমন্ত্রী তার মা, ভাই ও ভাইদের স্ত্রীসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তাদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। এরপর পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), মহিলা শ্রমিক লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ফিল্ম আর্কাইভ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, গণ গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, বেতার কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, জাতীয় মহিলা সংস্থা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ঢাকাস্থ টুঙ্গিপাড়া সমিতি, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, আবদুস সামাদ আজাদ ফাউন্ডেশন, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, টেলিযোগাযোগ শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত