সাঈদীর মৃত্যু

রাজধানীতে জামায়াত-শিবিবের তাণ্ডব

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত সোমবার রাতে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাণ্ডব চালিয়েছে। ঢাকায় সাঈদীর জানাজার নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়ার দাবিতে রাতভর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ভোররাত ৪টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ সদস্যরা সরে গেলেও ভোর ৫টার দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রবেশ করে পুলিশ। সাঈদীর ভক্তদের এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বিএসএমএমইউ প্রাঙ্গণ দখলে নেয় পুলিশ। ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি বের করে পুলিশ। এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজার দাবিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে সেখানে সাঈদী সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা করার উদ্যোগ নেয় তার সমর্থক ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তখন সেখানে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দোয়া ও মোনাজাত চলছিল। এ কারণে জানাজা শুরু করতে চাইলে বাধা দেন উপস্থিত আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ নিয়ে দুইপক্ষের বাকবিতণ্ডা থেকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সাঈদী সমর্থকরা মসজিদের উত্তর ফটকে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং গায়েবানা জানাজার দাবি জানান। তখন পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দীন মিয়া বলেন, শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দোয়া মাহফিল চলছিল। এর মধ্যে তারা জানাজা শুরুর চেষ্টা করলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হার্ট অ্যাটাকজনতি কারণে মারা যান। সারা রাত তার মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও তার স্বজনরা নাটক করেছে এবং তাণ্ডব চালিয়েছে। তিনি মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার দুই ছেলেকে জানায়। পরে তার দুই ছেলে মরদেহ পিরোজপুর নেওয়ার জন্য কারাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে। এর মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষ মরদেহের ময়নাতদন্ত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। সেই অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে আসা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট এসে মরদেহের সুরতহাল সম্পন্ন করেন। যখন ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হবে সেই মুহূর্তে তার ছেলেরা জোর দাবি জানায়, তারা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নিতে চায়। এ বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। পরে গভীর রাতে তারা জেল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়। গতকাল সকালে রাজধানীর মিন্টু রোডে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু এবং পরে জামায়াতে ইসলামীর তাণ্ডবের প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, এরপর মরদেহের গোসল শেষে পরিবার প্রস্তুতি নেয় পিরোজপুর নিয়ে যাওয়ার। যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে। তারা কোনোভাবে মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এ সময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় তারা গাড়ি ভাঙচুরও শুরু করে। এই হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, ফজরের নামাজের পরে তাদের অনুমতি দেওয়া হলো জানাজা পড়ার। কিন্তু নামাজের পর তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নেয়। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। এর মধ্যে তারা ফেসবুকে প্রচার করতে শুরু করল সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। অবশেষে পিরোজপুরে পৌঁছে গেছে সাঈদীর মরদেহ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা সাঈদী সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।