সাঈদীর গায়েবানা জানাজা

কক্সবাজারে সংঘর্ষ-ভাঙচুর নিহত ১ ওসিসহ আহত ২৮

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার, চকরিয়া, পেকুয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজারের চকরিয়ায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে আরো ১৩ জন, যেখানে পুলিশের ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এ সময় পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অপর দিকে পেকুয়ায় জানাজা শেষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ওসিসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। চকরিয়ার চিরিংগায় ঘটনার সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ। চকরিয়ার স্থানীয় লোকজনসহ পুলিশ জানিয়েছে, চকরিয়া সরকারি হাইস্কুল মাঠে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা করার পূর্ব ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু অনুমতি না থাকায় পুলিশ সেখানে জানাজা পড়তে দেয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে বিকাল সাড়ে ৪টায় কয়েক হাজার লোক চকরিয়া পৌরসভার লামার চিরিংগা এলাকায় জড়ো হয়ে জানাজা শুরু করে। এ সময় অজ্ঞাত মুখোশধারী অর্ধশত লোক গিয়ে গুলি বর্ষণ শুরু করে। যেখানে জানাজা প- হয়ে গেলে অজ্ঞাত লোকজন গুলিবর্ষণ করতে করতে লাঠি দিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে। পুলিশ আসার আগেই এসব লোকজন পালিয়ে যায়। পরে জানাজায় আসা লোকজন ইটপটকেল নিক্ষেপ করে। এসে পুলিশের একটি গাড়ি ও চলাচলরত অপর একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ছৈয়দ ইফতেখারুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধসহ সাতজন আহত চিকিৎসা নিচ্ছেস।

নিহত ব্যক্তি মোহাম্মদ ফোরকান (৬০), তিনি চকরিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল ফজলের ছেলে বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। বিষয়টি নিয়ে চকরিয়া থানা ওসি জাবেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি নিজেসহ পুলিশের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে কোনটা কাদের, তা নিশ্চিত নন তিনি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, চকরিয়া জানাজা নিয়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে। তবে গুলিবর্ষণ পুলিশের পক্ষে করা হয়নি। এতে হতাহত কতজন, তা বিস্তারিত নিয়ে জানানো হবে। পেকুয়ায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার বারবাকিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত পুলিশ সদস্যদের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হামলায় আহতরা হলেন পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শাহিনুল ইসলাম, অমর চন্দ্র বিশ্বাস, মফিজুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জসিম উদ্দিন, কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া, প্রদীপ কুমার দে, মো. সবুর মিয়া, রবি উল্লাহ, ইমরান হোসেন, রামকৃষ্ণ দাশ, তৌহিদুল ইসলাম, রিপন মিয়া, রিয়াজুল ইসলাম। এদের মধ্যে এসআই শাহিনুল ইসলামের হাত ও অমর চন্দ্র বিশ্বাসের পায়ের আঘাত গুরুতর।

পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার ঘটনার সত্য নিশ্চিত করে জানান, পেকুয়া সদরের একটি মাঠে সাঈদীর গায়েবানা জানাজার প্রস্তুতি নেয়া হলে ওখানে অনুমতি না থাকায় বাঁধা প্রদান করা হয়। ওখান থেকে লোকজন নিয়ে বারবাকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদির নেতৃত্বে লোকজন বারবাকিয়া বাজারে চলে যায়। ওখানে সাঈদীর গায়েবানা জানাজার নামাজ শুরু করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশের একটি টহল টিম বাজারে উপস্থিত ছিল। নামাজ চলাকালীন সময় হঠাৎ করে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান ওসি। এ সময় জানাজায় আগত লোকজন পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে তিনিসহ ১৫ জন পুলিশ আহত হন।

মোহাম্মদ ওমর হায়দার বলেন, পুলিশ ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।