জাতীয় শোক দিবস পালিত

খুনিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন, এবং সর্বস্তরের মানুষ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও ম্যুরালে ফুলেল শ্রদ্ধা, কালো ব্যাজ ধারণ, জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, শোক র‌্যালি, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও খাবার বিতরণ। এসব কর্মসূচি থেকে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন ও বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানানো হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিদেশে মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্যদিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। সকাল ৬টা ৩২ মিনিটে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা। আওয়ামী লীগের পর কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর একে একে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, ওলামা লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে বনানী কবরস্থানে অন্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে শোক দিবস পালন করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।

রাজধানীতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ও অলিগলিতে দুস্থ-অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের খাবার বিতরণ করেছে থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

রাজধানীর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে সহস্রাধিক দুস্থ-অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। রাজধানীর শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোশাররফ হোসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টে নিহত সব শহীদদের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। পরে ১২০০ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেন তিনি।

ঢাকা-৫ নির্বাচনি এলাকার ১৮টি স্থানে ১৫ আগস্টে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত সব শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোওয়া-মিলাদ মাহফিল, কোরআনখানি এবং বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভার মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরেন প্রয়াত এমপি আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লার জেষ্ঠ্যপুত্র ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মশিউর রহমান মোল্লা সজল।

কৃষকলীগ : বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এ রোরআন শরিফ খতম, দোয়া ও অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করে বাংলাদেশ কৃষকলীগ।

যুবলীগ : ১৫ আগস্টের সব নিহতদের জন্য কোরআন খতম, দোয়া, মিলাদ ও তবারক বিতরণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমানে এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এ সময় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মাইনুল ইসলাম খান নিখিলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে শোক দিবস পালন ও অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সংগঠনিক সম্পাদক গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় দোয়া মাহফিল ও দুস্থ অসহায় মানুষের মাঝে তিনি রান্না করা খাবার বিতরণ করেন। এর আগে সূত্রাপুরে ১৫ আগস্টের নিহত সব শহিদের জন্য বিশেষ দোয়া মাহফিল ও তবারকও বিতরণ করেন তিনি। এ সময় গাজী সারোয়ার হোসেন বাবু বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, তার সঙ্গে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নিছা মুজিব, শেখ জামাল, শেখ কামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ায়ম্যান শেখ ফজলুল হক মণিকেও তারা হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর যে পঁচি খুনি এখনো পলাতক রয়েছে, তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কর্যকর করতে হবে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু জড়িয়ে আছেন। মহান রাব্বুল আলামীন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য।

বিআইডব্লিউটিএ ভবনে আলোচনা সভা : মতিঝিলস্থ বিআইডব্লিউটিএ ভবনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস : শোক থেকে শক্তিতে নৌ খাতের ‘জয় যাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. একেএম মতিউর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন : দুপুরে কৃষিবিদ কনভেনশন হলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে শোকসভা ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ।

হুইলচেয়ার বিতরণ : জাতীয় শোক দিবসে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইলচেয়ার বিতরণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, সহ-সভাপতি আব্দুর রশীদ সরদার, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রব ভুঁইয়া, সন্তুস কুমার দাস, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ আখন, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মো. শাহ আলম, শ্রমবিষয়ক সম্পদক নুরুল ইসলাম মিয়াজী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক এসএম জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট দেবাশীষ কর মধু প্রমুখ।