শোক দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান

১৫ আগস্টের নেপথ্যে জিয়া

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিবেদক

বিদেশি প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা পছন্দ করে না বলেই তারা নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি উতলা। গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে সহ্য করতে না পেরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে মেতেছে। এ অপশক্তির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জনগণকে সর্তক থাকতে হবে।

গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ ও মহামারির মধ্যেও দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যারা দেশের ধ্বংসযজ্ঞ চালালো, তাদের সঙ্গে বসতে হবে কেন? আমার মনে হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা তাদের পছন্দ না। এদের উদ্দেশ্য, নির্বাচন বা গণতন্ত্র না। এরা দেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এখন নির্বাচন নিয়ে অনেকে উতলা হয়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- ২০০১ সালে যখন আমাদের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে, তখনতো নির্বাচন নিয়ে তাদের এত মাথাব্যথা ছিল না। ’৯৬ সালে খালেদা জিয়ার বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে তো তাদের এমন চেতনা দেখিনি। খালেদা জিয়া ভুয়া ভোটার নিয়েও তো তাদের কোনো উদ্বেগ দেখিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে নানা রকম চক্রান্ত আছে। অনেকে এটিকে ব্যবহার করতে চায়। আর এখানে বসে আশপাশে আক্রমণ করবে। আমাদের কিছু আতেল আছে। তারা এসব চিন্তা করে কি না জানি না। কিছু উপলব্ধি না করেই দুটো পয়সার পাওয়ার আশায় এদের সঙ্গে সূর মিলায়। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আর আগেও গ্যাস বিক্রির কথা আসছিল, আমি বলেছিলাম- দেশের স্বার্থ বেঁচে ক্ষমতায় আসতে হবে, এত ক্ষমতালোভী আমি না। আমার বাবাও এমন ছিলেন না।

এ সময় ড. ইউনূসেরও সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের একজন কুলাঙ্গার সুদখোর আছে। শ্রমিকের অর্থ মেরে খায়। ট্যাক্স দেয়নি। গরিব থেকে উচ্চ সুদে টাকা নিয়ে মেরে দিয়ে বিদেশে পাচার করে। এটাই তো কথা। উনি তাদের প্রিয় ব্যক্তি। আর আমরা কাজ করি, মানুষের কল্যাণে।

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়ার আসল রূপ বেরোলো। ১৫ আগস্ট মিথ্যা জন্মদিন পালন শুরু করল। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিয়ের সময় জন্ম তারিখ ১৫ আগস্ট উল্লেখ করেননি। সার্টিফিকেটেও নেই। এমনকি ফাস্ট লেডি হিসেবে সে যে পাসপোর্ট করেছেন, সেখানে ১৫ আগস্ট জন্মদিন ছিল না। ক্ষমতায় আসার পর মিথ্যা উৎসব শুরু করেছে, জঘন্য হত্যাকাণ্ডের দিন। কত জঘন্য এটা! আজকে তাদের কাছে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। মানবাধিকার সে সময় কোথায় ছিল?

তিনি বলেন, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। এটাই বাস্তবতা। ভেবেছিল কোনোদিন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এ দেশের মানুষকে। ২১ বছর পর তাদের সমর্থনে ক্ষমতায় এসে সেই বিচারের উদ্যোগ নিই। ৩৫ বছর সময় লেগেছে বিচার পেতে। কিছু খুনির রায় কার্যকর হয়েছে। খুনিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছেন জিয়া। এরশাদ এসেও তাদের পুনর্বাসন করেছে। ব্যারিস্টার মইনুল খুনিদের নিয়ে দলও গঠন করে। এটা খুনিদের মদদ দেওয়া।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে আমার মা, আমার তিন ভাই, কামাল-জামালের বউদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ইতিহাসের এ জঘন্য ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটেছিল। এ ঘটনা যেন সেই কারবালার ঘটনাকেও হার মানায়। কারবালার ঘটনা শিশু-নারীদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট শিশু-নারীদেরও তারা ছাড়েনি। যারা আমাদের বাড়িতে সব সময় ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া করেছে, তারাই বেইমানি করেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান না মেনে খুনি মোস্তাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেই জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাপ্রধান। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

শেখ হাসিনা বলেন, মির্জাফর যখন বেইমানি করে তিন মাসও ক্ষমতা থাকতে পারেনি। দুই মাসের মাথায় তাকে চলে যেতে হয়েছিল। একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। মোস্তাককে বিদায় আর জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসে। আরেক দিকে সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি। সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে, জিয়া ক্ষমতা দখল করে। উর্দি পরে ক্ষমতারোহণ এবং পরে নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করারও চেষ্টা করে। আর্মি রুলস ভঙ্গ করে একটা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও করে। ভোট কারচুপি ও ভোটচুরি তো সেখান থেকে শুরু। এরপর বিএনপি নামক সেই দল সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানির উদ্দেশে রওনা হয়ে ৩১ জুলাই আমরা সেখানে পৌঁছাই। আমরা ভাবতেও পারিনি আমাদের জীবনে এমন একটা আঘাত অপেক্ষা করছে। ১৩ তারিখে আব্বার সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে, সবার সঙ্গে কথা হয়। ১৫ তারিখে এ ঘটনা ঘটার পর যখন আমরা জানতে পারি, তখন সব তথ্য আমরা জানতে পারিনি। আমরা আপনজন হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি, বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমারও তো হারিয়েছি, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশে কী হারিয়েছিল? বাংলাদেশের মানুষ কী হারিয়েছিল?

বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য কন্যা বলেন, আমার বাবা সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এদেশে মানুষের জন্য। মানুষের কথাই বেশি ভাবতেন। তিনি তো ভালোবেসেছিলেন মানুষকে। এদেশে মানুষের ভাগ্য-পরিবর্তন করবেন। তাদের সুখী জীবন দেবেন। অন্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের উন্নত জীবন দেবে। সেটাইতো ছিল তার জীবনের একমাত্র সাধনা। কাজে তিনি নিজের জীবনকে সেভাবে উৎসর্গ করে গেছেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছেন।

তিনি বলেন, খুনিরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ফেলে। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ করে। জয়বাংলা স্লোগান বাদ দিয়ে জিন্দাবাদ স্লোগান নিয়ে আসে। ইতিহাসই বিকৃতি করে। বাংলাদেশের মানুষের উন্নতির সব স্বপ্ন বন্ধ হয়ে যায়।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি প্রমুখ। আলোচনা সভা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন।