আজ সিরিজ বোমা হামলার ১৮তম বার্ষিকী

‘অতীতে জঙ্গিবাদে জড়িতরা নতুন করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে’

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ১৭ আগস্ট। দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার ১৮তম বার্ষিকী। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনাআমলে ২০০৫ সালের এই দিনে মুন্সীগঞ্জ ছাড়া দেশের ৬৩ জেলার ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল তারা।

এ ঘটনায় তখন দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয় সারা দেশে। এর পর প্রতিবছরই এই দিনে সারা দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এদিকে র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, অতীতে জঙ্গিবাদে যারা জড়িত ছিল, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে নতুন করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহে তৎপর রয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গত কয়েক বছর জঙ্গিবাদ নিস্ক্রীয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও দেশকে অস্থিরতা করার চেষ্টা চলছে। জঙ্গি দমনে র‌্যাবের কোনো তৎপরতা আছে কি না জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাবের মূল ম্যান্ডেট জঙ্গি নিয়ে কাজ করা। এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৯টি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইমাম মাহমুদের কথায় স্বপরিবারে পাহাড়ে ‘হিজরত’ করা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, তাদের মধ্যে নারীও রয়েছে। জেএমবির প্রসঙ্গ টেনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা দেখেছি ১৭ আগস্ট দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলা করেছে জেএমবি, পরবর্তী সময়ে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি)। এই সংগঠনগুলোর তৎপরতা আগের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। গত বছর জেএমবির স্বঘোষিত আমির উজ্জ্বল মাস্টারকে ব্যাংক ডাকাতি করার সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়। জেএমবি বা হুজির মতো সংগঠনগুলো অর্থ সংকটে ভুগছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে নেতৃত্ব সংকট ছিল।

তিনি বলেন, এই পুরাতন সংগঠনগুলোতে যারা এখনো তৎপর রয়েছে। জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করতে চায়, তারা একসঙ্গে বসে নতুন জঙ্গি সংগঠন করছে।

সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ায় তারা যুক্ত ছিল। এই সংগঠনটি আনসার আল ইসলামের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল। এই সংগঠনের আমিরসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংগঠনটি আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। নতুন করে তৎপর হওয়া জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দারা নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সিরিজ বোমা হামলা দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে জঙ্গি-সন্ত্রাসীগোষ্ঠী দেশের ৬৩টি জেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায়।

প্রতি বছরের মতো এবারও ঘৃণ্য ও নারকীয় বোমা হামলার এই দিনটিকে আওয়ামী লীগ ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী দিবস’ হিসেবে পালন করবে। এ উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।

দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে আজ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকাল ৩টায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।

এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ছাত্রলীগ : ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা ও স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন আস্ফালনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত ‘ছাত্রসমাজের পদযাত্রা ও সমাবেশ’ করবে সংগঠনটি।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ : বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টাব্যাপী গুলশান-২ নম্বর হতে গুলশান-১ নম্বর পর্যন্ত সিরিজ বোমা হামলাকারীদের বিচার ও জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবিতে ‘মানববন্ধন’ কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু এবং সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু।

কৃষক লীগ : ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী দিবস’ উপলক্ষ্যে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্র্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করবে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ এ তথ্য জানান।