ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইন অনুযায়ী সঠিক সময়ে ভোট করতে ইসি রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রায় বেশির ভাগ শেষ করেছে। এখন ১১ ধরনের নির্বাচনি মালামাল কেনার জন্য তোড়জোড় চালাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, নভেম্বরে সংসদ ভোটের তফসিল দেবে ইসি, এর আগে বেশিরভাগ কেনাকাটার কাজ শেষ করতে চায় কমিশন। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন প্রশিক্ষণ এবং নতুন অ্যাপ তৈরির কাজও শেষ করবে ইসি। সব কাজ শেষ হলে নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ভোট করবে ইসি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১২ কোটি ভোটারের বিপরীতে এবার নতুন করে ৮০ হাজার দেশীয় স্বচ্ছ ব্যালট কেনা, অমোচনীয় কালিসহ নানা ধরনের নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা, আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণ, নির্বাচনি ম্যানুয়াল তৈরি ও মনোনয়নপত্র মুদ্রণ, ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করাসহ আনুষঙ্গিক কাজ নিয়ে তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে একগুচ্ছ কাজের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এবং ভালোভাবে চলছে। ইতোমধ্যে ১১ ধরনের নির্বাচনি মালামাল কেনাকাটার কার্যাদেশ হয়েছে। দুয়েকটির সরবরাহও হচ্ছে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার আগের কাজ এবং তফসিল ঘোষণার পরের কাজগুলো সাজিয়ে একটা ‘চেকলিস্ট’ করছে ইসি সচিবালয়। এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব জানান, অর্ধশতাধিক কাজ সম্ভাব্য সময় ধরে বাস্তবায়ন অগ্রগতি কমিশনকে সময়ে সময়ে জানান হচ্ছে।

অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, হাতে থাকা ব্যালট বাক্সের বাইরে এবার নতুন করে অন্তত ৮০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স লাগছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান থেকে তা কেনা হচ্ছে। ব্যালট পেপারের জন্য নির্ধারিত প্রেস যথাসময়ে কাগজ সংগ্রহ ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়ের পর মুদ্রণের কাজ করবে। অন্যান্য কাজ নিয়ে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের দিকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে, ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত হবে, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রস্তুতি চলবে। নানা ধরনের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, আইনশৃঙ্খল বাহিনী, পর্যবেক্ষকদের সংস্থার বিষয়গুলো নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ থাকবে। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পরের কাজগুলো ঘোষণা হওয়ার পর সময় ধরে এগোবে। নির্বাচন পরিচালনা সাখা জানায়, নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে এবার সংসদ নির্বাচনে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। রোডম্যাপ ধরে সংলাপ, আইন সংস্কার ও সংশোধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শেষ হয়েছে। পযবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত হচ্ছে মাস খানেকের মধ্যে, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত হবে সেপ্টেম্বরে।

এদিকে এবার ইভিএমে ও সিসি ক্যামেরা রেখে ভোটের ভাবনা থাকলেও তা থেকে সরে যেতে হচ্ছে। তবে প্রযুক্তিগত সহায়তায় ভোটার, প্রার্থী, দল, প্রতীক ও ভোটকেন্দ্রের নানা ধরনের দিতে থাকছে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর ভোট ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নভেম্বরেই নির্বাচনি অ্যাপ চালু হবে। জানা জায়, ইসি যে অ্যাপ তৈরি করছে তার নাম বাংলাদেশ ইলেকশন অ্যাপ। এ অ্যাপ দিয়ে ভোটাররা সহজে প্রার্থীর নাম, পরিচিত, ছবি, দলীয় পরিচয় ও প্রার্থীর হলফনামার তথ্য দেখতে পাবেন। উপরন্ত ভোটকেন্দ্র এবং ভোটার নম্বর, ভোটকেন্দ্রের ছবিও দেখতে পাবেন। ভোট শেষে কেন্দ্রে ভিত্তিক ফলাফল, দল ভিত্তিক প্রাপ্ত আসন সংখ্যা এবং নিকটতম প্রার্থীর পরিচিতি ও প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাও দেখতে পাবে যে কেউ।

বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় আসছে পরিবর্তন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নীতিমালায় সংশোধন আনার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর এই উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ২০১৮ সালে একটি নীতিমালা করা হয়। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ওই নীতিমালাকেই ‘যুগোপযোগী’ করা হবে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক করবে ইসি সচিবালয়। ২৩ আগস্ট ওই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বর্তমান নীতিমালাটি পর্যালোচনা করা হবে।

পর্যবেক্ষকদের পেশাদারত্ব বজায় রাখতে হবে, পর্যবেক্ষক দল (কোনো মিশন) আনুষ্ঠানিকভবে বক্তব্য দেওয়ার আগে পর্যবেক্ষকদের কেউ ব্যক্তিগতভাবে গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে পারবেন না। পর্যবেক্ষকরা ভোটকেন্দ্র থেকে ফেসবুক, টুইটার বা এ ধরনের কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি কিছু সম্প্রচার করতে পারবেন না। ইসি সূত্র জানায়, ১০ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। সেখানে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে ‘যুগোপযোগী নীতিমালা’ প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরি করতে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন ও বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রথম থেকে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে- ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ সালের ৭ মে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত