ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আওয়ামী লীগে ঝুঁকছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো

আওয়ামী লীগে ঝুঁকছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নয়া মেরুকরণের পথে হাটছে ইসলামি দলগুলো। ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে বাড়াচ্ছে সাংগঠনিক তৎপরতা। এছাড়া নির্বাচনি লড়াইয়ে সামিল হতে জোটবদ্ধ হচ্ছে ইসলামি দলগুলো। আগামী সেপ্টেম্বরে ২০টি ইসলামি দল নিয়ে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। তবে এ জোটের বাহিরে থাকছে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামী ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামি আন্দোলন। এই দুটি দলের বাহিরে ছোট-ছোট ইসলামি দলগুলো ভোটের রাজনীতিতে দরকষাকষি করতে নানা সমীকরণ করছে। আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী হতে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। এজন্য ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন ইসলামি দলগুলোর নেতারা।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ইসলামি দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নতুন জোটে থাকতে পারে, ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টি (এমএ আউয়াল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (সৈয়দ সাইফুদ্দিন হাসান মাইজভাণ্ডারী), বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট (মিছবাহুর রহমান চৌধুরী), কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি (ফারহানাজ হক), আশেকানে আউলিয়া পরিষদ (আলম নুরী সুরেশ্বরী), গণ আজাদী লীগ (সৈয়দ শামসুল আলম হাসু তর্কবাগীশ-আতাউল্লাহ খান), জনদল (মাহবুবুর রহমান), তরিকত ফ্রন্ট (মুফতি মেহেদী হাসান), নেজামে ইসলাম পার্টি (মাওলানা হারিসুল হক), ইসলামিক ফ্রন্টসহ (বাহাদুর শাহ) অন্যান্য দল। নতুন জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আমি আগেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে ছিলাম। মহাজোট এখন আর সক্রিয় নয়। আওয়ামী লীগের বাহিরে যাওয়ার কোনো চিন্তা নেই। গত দুই বছর ধরে একটি নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এই জোট শুধুমাত্র নির্বাচন কেন্দ্রিক হবে এমন নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামি মূলবোধের ভিত্তিতে এই জোট গঠিত হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতন্ত্রচর্চায় বিশ্বাসী এই জোট হবে তরিকত ও কওমিপন্থী আলেম ও আধুনিক শিক্ষিতদের প্ল্যাটফর্ম। যারা সংবিধান সমুন্নত রাখতে চায় তারাই এই জোটে থাকবে।

ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট গঠন প্রক্রিয়া চলমান। আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে আশা করি। ইসলামি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। ২০ থেকে ২২টি রাজনৈতিক দল নতুন এ জোটে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবিচল আস্থা ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী হয়ে আমরা জোট গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে নির্বাচন করার আগ্রহ আছে। ইসলাম, মুক্তিযুুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রশ্নে কোনো আপস হবে না।

ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারকে নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন করে আসছি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি ইসলামি জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। এ জোটের মাধ্যমে শুধুমাত্র নির্বাচন না, ধর্মীয় মূল্যবোধ অসাম্প্রায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয় থাকবে। বিভিন্ন আলেম ওলামা সুফি মাশায়েখরা জোটে থাকবেন বলেও জানান জোটের এই নেতা।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর সমর্থন নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে আলেমদের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাদের কথায় সাধারণ মানুষ ভোট দেয়। ইসলামের কল্যাণে আওয়ামী লীগ অনেক কাজ করেছে। বিশেষ করে, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণসহ নানাবিদ কাজ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর এ কাজে আকৃষ্ট হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইসলামি দলগুলো আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অবস্থা ভেবে রাজনীতি করেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ। তাদের পাশ কাটিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে উদার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। বর্তমানে দেশে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে ১২টিই হচ্ছে ইসলামি দল। নিবন্ধনের বাইরে আরো অনেক ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল এবং সংগঠন রয়েছে, যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত