ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কীটতত্ত্ববিদ মনজুর

মশা নিধনের নামে ‘তামাশা’ চলছে

মশা নিধনের নামে ‘তামাশা’ চলছে

সারাদেশে মশা নিধনের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো মশা নিধনের নামে ‘তামাশা’ করছে। ডোবা-নালায় ব্যাঙ, হরিণ আর হাঁস দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। পৃথিবীর আর কোথাও এমনটা দেখা যায় না।

গতকাল শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। ‘কেন এই ডেঙ্গু মহামারি? পরিত্রাণ কোন পথে?’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে বাংলাদেশ ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর বলেন, ডোবা নালায় এইডিস মশা ব্রিড করে সেটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মশা নিধনের নামে নীতি-নির্ধারকরা অবৈজ্ঞানিক পন্থায় হাঁটছেন। এতে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, মানুষ মরছে। যেখানে অল্প সময়ে বেশিসংখ্যক রোগী, যেখানে পাওয়ার কথা না সেখানেও রোগী পাওয়া যায় সেটাই মহামারি। গত জুলাই মাসে যে আক্রান্ত এবং মৃত্যু হয়েছে, সেটা আক্ষরিক অর্থেই মহামারি। মানুষ ভয় পেতে পারে এজন্য সরকার ঘোষণা করতে পারছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৯৭ হাজার ৮৬০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৭ হাজার ৮৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। বাংলাদেশে ডেঙ্গু ‘আক্ষরিক অর্থেই মহামারী’ আকার ধারণ করেছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনগুলোর উদ্যোগ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মনজুর আহমেদ। তার কথায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তথ্য দিচ্ছে তা ‘খণ্ডিত’। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ডেঙ্গু হচ্ছে, আবার প্রাকৃতিক কারণেই ডেঙ্গু কমছে। মশা দমনে সিটিকরপোরেশনগুলো যেসব কর্মসূচি নিচ্ছে, সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই। সুতরাং, এসব ফগিং করলেও যা, না করলেও তা। সিটি করপোরেশন যদি এই মুহূর্তে তাদের মশা নিধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তাতেও যা হবে, কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও তাই হবে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের একসময়ের চেয়ারম্যান মনজুর পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রাকৃতিকভাবে বেড়েছে এবং প্রাকৃতিকভাবে কমে যাবে। সিটি করপোরেশন যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তাতে খুব বেশি কাজ হচ্ছে না। কীটতত্ত্ববিদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আমরা কথা বলছি। ম্যান মসকিউটো এফেক্ট কমাতে হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ মশা ৩/৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। উড়ন্ত মশা মারার বিকল্প নেই। ফগিংয়ের মাধ্যমে ২০ শতাংশও মশা মারা সম্ভব নয়। ইউএলভি ফর্মুলার মাধ্যমে এডাল্ট মশা মারতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু ফয়েজ মো. আসলাম, সাবেক সচিব মার্গুব মোরশেদ, কীটতত্ত্ববিদ ইন্দ্রাণী ধর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুর রহমান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত