বিদেশি প্রভাবমুক্ত সংসদ নির্বাচন

রাজনৈতিক দলের মতৈক্য প্রয়োজন

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য প্রয়োজন বলে মনে করছে বিশিষ্টজনরা। তারা বলছে, বিশ্বের কোনো দেশে নির্বাচনে বিদেশিরা এতো প্রভাব বিস্তার করার আগ্রহ দেখায় না। অথচ বাংলাদেশে ভোটের আগে বিদেশিদের তৎপরতা বেড়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষ দেশের নির্বাচন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে। তারা আলাপ-আলোচানার মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে এবং দেশের মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। এটাই হচ্ছে বিশ্বের যে কোনো দেশের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অথচ বিদেশি পর্যবেক্ষক কিংবা বিদেশি হস্তক্ষেপে দেশের ক্ষমতার মসনদ পাল্টে যাবে এমন স্বপ্ন দেখেন আমাদের দেশের বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিকদলগুলো। নির্বাচনের আগে বিদেশি প্রতিনিধিদলের আনাগোনা বেড়ে যায়, তারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক কিছু ভাবেন, অনেক পরামর্শ দেন। জানতে চান বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতি লিখিত আকারে প্রকাশিত এবং সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। অথচ তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হতে চায়। তাদের এসব তৎপরতা সাধামাটা চোখে তেমন কোনো বিষয় না হলেও দেশের সম্মানের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। আর এ পরিস্থিতির জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দায়ি বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। ভোটারদের ধারণা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিষয়ে কোনো মতৈক্য না থাকায় বিদেশিরা এমনটি করার সুযোগ পাচ্ছে। নিজেদের সমস্যা নিজেদের সমাধান করাই শ্রেয়।

সূত্র জানায়, দেশের কিছু রাজনৈতিক দল রাজনীতির মাঠে ব্যর্থ হয়ে বিদেশীদের কাছে ধরনা দেয়। এ কারণে বাংলাদেশের অভ্যান্তরীণ বিষয়ে বিদেশীরা কথা বলার সুযোগ পায়। এটি বন্ধ করতে দেশের সংবিধান ও আইনের উপরে আস্থা রাখা জরুরি। সংবিধান অনুযায়ী ভোট হলে দেশের জন্য ভালো হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানান, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার জন্য যা করা প্রয়োজন সেটি করছে ইসি। নভেম্বরে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় ভোট হবে। ভোট সুষ্ঠু করার জন্য যা যা প্রয়োজন ইসি সেটি করবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধান দুটি দলের যে কোনো একটি দল নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে দুটি দলই অংশ নেয়। এ জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, যেগুলো আসলে প্রয়োজন নেই। মূল দরকার আইনের প্রয়োগ।

সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, বর্তমান সংকট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক। অনেক সংকটের মূলে রয়েছে রাজনীতি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এমপি বলেছেন, দেশের শাসনতন্ত্র মেনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো বিদেশি শক্তির পরামর্শে বাংলাদেশ চলে না। আমরা একটা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা তার সবকিছুই করেছি। আমরা নির্বাচন করব আমাদের আইনের নিয়মে, আমাদের শাসনতান্ত্রিক নিয়মে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়, সেজন্য আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি। কেননা ওই আজিজ মার্কা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার আমরা করতে চাই না, সেজন্য এখন ফটো আইডি। আঙুল দেবেন আপনার ব্যালটটা বের হবে। এর উদ্দেশ্য ভুয়া ভোট যাতে না হয়। আমরা ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বক্স তৈরি করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, নির্বাচনের আগে মনে হয় তড়িঘড়ি করে কোনো দেশের সঙ্গেই নতুন চুক্তি করবে না বাংলাদেশ। এতে দেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। দেশ এখন একটি পজিশন নিয়ে আছে। আমরা ব্যালান্সড বৈদেশিক নীতি মেনে চলছি। ক্ষমতাসীন ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক প্রবীণ নেতা, আমির হোসেন আমু বলেছেন, বিএনপির ষড়যন্ত্র এ দেশের মাটিতে টিকবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বিএনপি। তবে তা সফল হবে না। এ দেশের মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্র টিকবে না। সব চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দেশের উন্নয়নের গতি বজায় রাখা হবে।

এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের বলে, আমরা নাকি খালি বিদেশিদের কাছে যাই। আমরা বিদেশীদের কাছে যাই না। মাঝে মাঝে বিদেশিরা ডাকেন। জানতে চান দেশের কী অবস্থা, তোমরা কী করতে চাও, কী করবে?’

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-ঘোষিত ভিসানীতি হলো তিনি বিশ্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। সুতরাং তারা তাদের কাজ করবেন। যেখানে গণতন্ত্র নেই, তাদের গণতন্ত্র সম্মেলনে ডাকেন না তারা। আবার তারা নিষেধাজ্ঞাও দেন। বিএনপি মনে করে, এখানে (বাংলাদেশ) জনগণের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এখানে ভোটের অধিকার দেয়া হচ্ছে না। মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।