ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

রাজনীতির ইতিহাসে জঘন্যতম অধ্যায়

রাজনীতির ইতিহাসে জঘন্যতম অধ্যায়

বিভীষিকাময় রক্তাক্ত ২১ আগস্ট আজ। বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৯তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলায় রক্তগঙ্গা বইয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের সমাবেশ। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা এবং গুলি বর্ষণ করে ঘাতকরা। ৭৫’র ১৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সৃষ্টি হয় এক জঘন্যতম অধ্যায়। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে সন্ত্রাসের শিকার হয় আওয়ামী লীগ। গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হয় পাচ শতাধিক। গ্রেনেডের আঘাতে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেকে। আহতরা গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যু পানে। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাও।

এই বর্বরোচিত হামলায় নিহতরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন, ইসাহাক মিয়া প্রমুখ। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান আরো কয়েকজন। ৫৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট মারা যান নারী নেত্রী আইভি রহমান। আহত হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ে বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী ও তৎকালীন সরকারের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেদিন বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শান্তির সমাবেশ; আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দলটি। ট্রাকে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৫টার কিছু পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষ করেন।

‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে মাইক থেকে সরে যাওয়ার মুহূর্তেই প্রথম গ্রেনেডটি ছোড়া হয়। ট্রাকের বাঁ পাশে পড়ে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকে থাকা জ্যেষ্ঠ নেতা এবং নিরাপত্তাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে ট্রাকের ওপর বসিয়ে দেন।

দফায় দফায় বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ।

১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চার পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথরদেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। এ হামলার লক্ষ্যই ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রক্তাক্ত মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তির গুরুতর ক্ষতি হয়।

শাস্তি দেখে যেতে চান আহতরা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শরীরে ৫৬টি স্প্রিন্টার নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান। স্প্রিন্টারগুলো কিডনি, পায়ের রগ এবং শিরার মধ্যেও আছে।

তিনি বলেন, যন্ত্রণা নিয়ে ১৮ বছর তো কাটিয়ে দিয়েছি। বাকি জীবনটাও এভাবে কাটাতে হবে। গ্রেনেড হামলাকারী ও মদতদাতাদের শাস্তি দেখে যেতে পারলে সব যন্ত্রণার অবসান হবে। ২১ আগস্টের ঘটনায় গুরুতর আহতদের মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহবুবা ইয়াসমিন বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোরব ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়েছে। তবে রায়ে মূল পরিকল্পনাকারী তারেক রহমানের ফাঁসির আদেশ হয়নি। তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। তার ফাঁসির আদেশ হলে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারতাম।

কর্মসূচি : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আজ বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এছাড়া সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ এবং নিহতদের স্মরণে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কর্র্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতির আহ্বান জানান।

একই সঙ্গে ২১ আগস্ট নিহতদের স্মরণে সারাদেশে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচি পালনে দল এবং তার সহযোগী ও সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত