ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেখ হাসিনাকে উদ্ধারের মুহূর্ত আজও মানুষকে আতঙ্কিত করে

শেখ হাসিনাকে উদ্ধারের মুহূর্ত আজও মানুষকে আতঙ্কিত করে

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। ওই ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ জন আহত হন। দেশের রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করতেই এ বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মূলত শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে লক্ষ্য করে আটটি আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় খুনিরা। যদিও ওই ভয়াবহ হামলা থেকে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। পরে ঘটনাস্থলের কাছে বেশকিছু অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায়।

এই ঘটনার তদন্তে ও আইনি কার্যক্রমে জানা যায়, সেনা ও বিমান বাহিনীর সাবেক দুই কর্মকর্তা মেজর (অব.) শোয়েইব মো. তরিকুল্লাহ্ ও স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন শেখ হাসিনাকে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। তারা দুজনেই এলিট স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক সদস্য। সুরক্ষা প্রদানের জন্য তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন।

মামলার নথি ও তদন্তের নথিপত্রে দেখা যায়, বিকাল ৫টা ১৮ মিনিট থেকে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড ধরে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং ওই দুই সাবেক কর্মকর্তা ট্রাকে ওপর ছিলেন। ট্রাকটিকে তখন জনসভার অস্থায়ী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। নিচে তদন্তপ্রক্রিয়া অনুযায়ী ওই ৪৫ সেকেন্ডের বর্ণনা দেয়া হলো-

বিকাল ৫টা ১৮ মিনিট শেখ হাসিনা জনসভার সভাপতির ভাষণ শেষ করে ট্রাক থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় আততায়ীরা প্রথম গ্রেনেড ছুড়ে মারে এবং তা বিস্ফোরিত হলে ট্রাক ও ট্রাকের আশপাশের মানুষ আতঙ্কে দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। দলীয় নেতারা ট্রাকের সামনের দিকে শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানবঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় গ্রেনেডটি ট্রাকের সবাইকে বসে পড়তে বাধ্য করে। এ সময় মামুন শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য তাকে টেনে ট্রাকে রাখা একটি ছোট টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে দেন এবং তাকে নিচু করে রাখেন। এ সময় শোয়েইব চিৎকার করে মামুনকে শেখ হাসিনাকে নিচু করতে বলেন এবং পরিস্থিতি বুঝতে কয়েকবার বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে ট্রাকে ওঠানামা করেন।

পাশের ভবনগুলোর ছাদ থেকে গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছিল। সপ্তম গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত হামলাকারীরা একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ছিল। এ সময় শোয়েইব মামুনকে চিৎকার করে বলেন, ‘আপাকে (শেখ হাসিনা) বের করে আনো। মামুন নিচু করেই তাকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে এনে শোয়েইবকে চিৎকার করে বলেন, ‘জিপের দরজা খোল।’ মামুন যখন শেখ হাসিনাকে ট্রাকের সিঁড়ির কাছে আনলেন, শোয়েইব তখন সিঁড়ির মাঝামাঝিতে ছিলেন। শেখ হাসিনাকে ট্রাকে দেখতে পেয়ে হামলাকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রমনা ভবন থেকে অষ্টম গ্রেনেডটি ছুড়ে মারে। গ্রেনেডটি ঘুরতে ঘুরতে বিস্ফোরিত হয় এবং জ্বালানি ট্যাংকে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ঢুকলে সেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে তেল পড়তে থাকে। মামুন আবারও তাকে রক্ষা করতে ট্রাকের নিচে রাখেন। কয়েক মুহূর্ত পর শোয়েইব ট্রাক থেকে নিচে নেমে জিপের দরজা খুলে এবং ট্রাকের সিঁড়ির কাছে যান। সেখানে মামুন শেখ হাসিনাকে নিয়ে এলে তারা দুজন মিলে দ্রুত তাকে জিপে ঢুকিয়ে দেন। ৫টা ১৯ মিনিটে শেখ হাসিনা জিপে ওঠামাত্র তা ধানমন্ডি সুধাসদনের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। উভয় নিরাপত্তা এজেন্টের দেহেই তখন গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ঢুকে থাকায় তাদেরও চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন ছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত