ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

জোটের রাজনীতিতে ফিরছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

জোটের রাজনীতিতে ফিরছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাহিরে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি জোটের রাজনীতিতে ফিরছে। তারা ভোটকে সামনে রেখে বিভিন্ন ছোট-বড় দলকে নিজেদের সঙ্গে জোটে টানতে তৎপরতা চালাচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা)সহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আগেই জানিয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে যেসব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে তারাও গোপনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক জোট গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি বর্তমান সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবে বলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন। নির্দলীয় সরকার না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়- বিএনপির এমন অবস্থান নির্বাচনের আগে থাকছে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপিও নির্বাচনে আসবে এমনটি ধরে নিয়েই জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে আসবে এই ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি পর্ব শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনও।

আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। সঙ্গত কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই আদর্শিক জোটের বাইরেও ভোটের মাঠে নির্বাচনি জোট করা যেতে পারে। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকটি দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

গত ২৭ জুলাই ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর নিউ ইস্কাটনস্থ বাসভবনে সম্মিলিত জাতীয় জোট-ইউএনএ’র মহাসচিব ডা. খন্দকার মো. ইমদাদুল হক সেলিমের নেতৃত্বে জোটের শরিক দলগুলোর ১০ জন চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শেখ হাসিনার পাশে থাকার কথা জানায় সম্মিলিত জাতীয় জোট ৫৮ দলীয় ইউএনএ। তারা বলছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট ১৪ দলের সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে।

একাধিক সূত্র জানায়, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে দেশের ইসলামী দলগুলো অনেকটাই বিশ্বাস করে। ফলে নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ভোটের অঙ্কে এগিয়ে আছে বিএনপি। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ইসলামপন্থি দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে তৎপরতা বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশে দলটির একজন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, দুজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, একজন যুগ্ম সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক সম্পাদককে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে এমন কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিএনপিকে ভোটে আনতে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে তাদের চেষ্টা থাকবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো সময়ই এককভাবে নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই না। ফাঁকা মাঠে আমরা খেলতে চাই না। আমরা চাই, তারা নির্বাচনে আসুক, তাহলে নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। সব দলের অংশগ্রহণ আগামী নির্বাচনে থাকুক, এটা আমরা চাই। সেই কারণে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা আমরা করব। এদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেছেন, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। কেন না, জাপা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি নির্বাচনমুখী দল।

বিরোধী দলীয় নেতার মুখপাত্র কাজী মামুনূর রশীদ বলেন, শিগগিরই জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন হবে। এর পরপরই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, রওশন পন্থিদের পর জিএম কাদের পন্থিরাও আগামী নির্বাচনে আংশ নেয়ার ঘোষণা দিতে পারেন।

অন্যদিকে বিএনপি গোপনে নির্বাচনের প্রস্ততি নিচ্ছে। তারা জোট নিয়ে তৎপর হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সমমনা ৩২টি রাজনৈতিক দল। গঠিত হয়েছে আলাদা তিনটি রাজনৈতিক জোট। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনে এসব দলকে নিয়ে বিএনপি কর্মসূচী পালন করছে। যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে এই ছোট দলগুলোর রাজপথের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ সাতটি দল নিয়ে গঠন হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে গঠিত হয়েছে ১২ দলীয় জোট। আর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নামে একত্র হয়েছে ১১টি রাজনৈতিক দল।

এই তিন জোটের বাইরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি স্বতন্ত্র দল হিসেবে বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলন করছে। বিএনপির সমর্থনে তিনটি জোটে আছে ৩০টি দল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে ছোট দলগুলোর প্রাসঙ্গিকতা খুব একটা নেই। নির্বাচনি রাজনীতিতে বিএনপির সমর্থনে তিন জোট ও জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর উল্লেখযোগ্য ভোটারও নেই। সরকার পতনের আন্দোলন সফল করতে হলে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে মাঠে নামাতে হবে, যেটি এখনো হয়নি বলেই তিনি মনে করেন।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমিত হয়ে আসবে। বিএনপিও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আস্থায় নেবে এবং নির্বাচনে আসবে। রাশেদা সুলতানা বলেন, তিনি এখনো আশাবাদী বিএনপি ভোটে আসবে। দেড় বছর ধরে বরাবরই বলে আসছি, তারা আসবে। রাজনীতির কূটকৌশল, কে কীভাবে এগোবে, ভোটের আগের দিন পর্যন্ত বলা কঠিন। এটা তারা কীভাবে নিচ্ছেন, কী কারণে করছেন, কী চিন্তা করছেন এটা তাদের ব্যাপার। আমরা কিন্তু আশাবাদী, কমিশন মনে করে ইনশাহআল্লাহ আসবে। তিনি বলেন, আমাদের আসলে একটা চতুর্মুখী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ভোট করতে গেলে আমাদের যে ধরনের কাজ করতে হয়, সব শুরু করেছি। অনেক এগিয়েছে এবং চলছে। তোড়জোড় চলছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নির্দেশিকা তৈরির। এটা শুরুর আগে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এজন্য কেন্দ্রের তালিকার খসড়া এসে গেছে। এখন ভোটকেন্দ্র ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নির্বাচন করার বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসার দিয়ে কয়েক লাখ লোকবলকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব বিবেচনায় নীতিমালা মেনে কাজ করতে হবে। পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করবেন তারা। রাশেদা সুলতানা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে কমিশনের করণীয় কিছু নেই। সবসময় বলি, বিশ্বাস করি, এসব প্রশমিত হবে। আলটিমেটলি একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ভোট করার জন্য আমাদের নিরন্তর চেষ্টা থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত