ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নেপথ্যে জেসমিন নিপার কমিটি বাণিজ্য

সাভারে ‘ফের বিতর্কিত’ যুব মহিলা লীগ

সাভারে ‘ফের বিতর্কিত’ যুব মহিলা লীগ

বিতর্ক যেনো পিছু ছাড়ছে না যুব মহিলা লীগের। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমালোচনা জন্ম দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। দলের দুঃসয়মে আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সংগঠনটি চরম ভাবমূর্তি সংকটে ভুগছে। সংগঠনের নীতি-আদর্শ ভুলে যেতে বসেছে যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা। সংগঠনটির নেত্রীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এতে করে সরকার ও দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বারবার সর্তক করার পরও হুশ ফিরছে না সংগঠনটির দায়িত্বশীলদের। নির্বাচনি বছরে সহযোগী সংগঠনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের নেত্রী মেহেনাজ তাবাচ্ছুম মিশুর অনৈতিক কাজে ফের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে আওয়ামী লীগ। এর আগে যেমনটা পড়েছিল পাপিয়া কাণ্ডে। সাভারে কিশোরীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার চেষ্টার তথ্য ফাঁস হওয়ার পরপরই দেশের পাড়া-মহল্লাসহ সর্বত্রই সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে মেহেনাজ তাবাচ্ছুম মিশুকে সাময়িক বহিষ্কার করে যুব মহিলা লীগ। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাভারে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের বিতর্কিত কমিটির নেপথ্যে অর্থ বাণিজ্য। ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত এই কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন আক্তার নিপা। কমিটি গঠনের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের একজন ছিলেন তিনি। তার সুপারিশপ্রাপ্তরাই ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের বিভিন্ন পদে আসেন। ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের উত্তর-দক্ষিণের নেতারা জেসমিন আক্তার নিপার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অতীত রাজনৈতিক জীবনেও অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জেসমিন আক্তার নিপা। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। অভিযোগের কারণে মাত্র ছয় মাসের মাথায় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দিতে কমিটি স্থগিত করা হয়। এত বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেও ২০১৭ সালে মহিলা যুব লীগে নিজের জায়গা করে নেন জেসমিন আক্তার নিপা। সরাসরি কেন্দ্রীয় কমিটির যুব মহিলা কল্যাণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নেন তিনি। তখন তিনি ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হন।

২০২২ সালে ১৫ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চলতি বছরে ১৬ জুলাই যুব মহিলা লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়, সেখানে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন জেসমিন আক্তার নিপা।

জেসমিন আক্তার নিপার কাছে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিসহ আরো কয়েকজন ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের দায়িত্বে ছিলাম। এখানে আমাদের পছন্দের কোনো প্রার্থী ছিল না। স্থানীয় নেতাদের সুপারিশেই ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের কমিটি করা হয়েছে। আর ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহনাজ তাবাচ্ছুম মিশুকে পদ দিতে সুপারিশ করেছিলেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।’

সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন সমানে রেখে আমাকে কেউ বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আমি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও কারো জন্য সুপারিশ করিনি।’

ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাসলিমা শেখ লিমাও একজন বিতর্কিত নেত্রী, যিনি জনসাধারণের ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে; যা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে উঠে এসেছে। যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সারোয়ার বলেন, ‘আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস। আমরা এই মাসে শোকের কর্মসূচিগুলো পালন করছি। নির্বাচনি বছরে সহযোগী সংগঠনকে কেউ যাতে বিতর্কিত করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেপ্টেম্বরে আমরা কঠোর অবস্থানে যাব। যারা সংগঠনের নীতি বহির্ভূত কাজে জড়িত থাকবে, তাদের বহিষ্কার করা হবে।’ যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সারমিন সুলতানা লিলি বলেন, ‘ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক তাবাচ্ছুম মিশু অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার তথ্য আমাদের কাছে আসায় আমরা তাকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছি। তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রমাণিত হলে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। কেউ সংগঠনের সুনাম নষ্ট করলে যুব মহিলা লীগে তার জায়গা হবে না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত