জাপার চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে দিনভর নাটকীয়তা

দলটিতে আবার অস্থিরতা

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান পদ নিয়ে গতকাল দিনভর নাটকীয়তা লক্ষ্য করা গেছে। দিনের প্রথমভাগে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে জিএম কাদেরের পক্ষ থেকে জানানো হয় এটি ভুয়া তথ্য। সব কিছু মিলে আবারো অস্থিরতা বিরাজ করছে জাপায়।

জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের তিন দিনের ভারত সফরের মধ্যেই গতকাল নিজেকে বিরোধীদলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। সূত্র জানায়, দলের চারজন কো-চেয়ারম্যান গত ডিসেম্বরে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অনাস্থা এবং অযোগ্যতার অভিযোগ তুলে রওশন এরশাদকে চিঠি দেন। সেসময় রওশন এরশাদ সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে জিএম কাদেরকে আরো সময় দেওয়ার কথা জানান। গতকাল সকালে তিনি হঠাৎ করেই নিজেকে জাপা চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন বলে খবর আসে। রওশন এরাশাদের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের মধ্যে গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। জাপার চার কো-চেয়ারম্যান হলেন রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম ও আবু হোসেন বাবলা। দলের নতুন কাউন্সিলও ঘোষণা করা হয়েছে এবং পরবর্তী কাউন্সিল পর্যন্ত রওশন এরশাদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এদিকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নিজেকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করার নিউজ ভুয়া বলে জানিয়েছেন পার্টির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটি সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। চুন্নু বলেন, এই খবর ভুয়া। আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে কারো চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ ইচ্ছা করলেই চেয়ারম্যান হতে পারবেন না। যে কাউকেই অব্যাহতি দেওয়াও যাবে না। নিয়ম আছে, সেই নিয়মের মধ্যে পড়তে হবে। জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। আমার মনে হয় কিছু ব্যক্তি যারা দল থেকে বহিষ্কৃত তারা ম্যাডামের (রওশন) নামটা ব্যবহার করে ফেক নিউজ দিয়েছেন। সারা রদশের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও মানুষকে অনুরোধ করব, এ ধরনের কোনো ঘটনা জাতীয় পার্টিতে ঘটেনি বা কোনো সুযোগ নেই। মজিবুল হক চুন্নু বলেন, যাদের স্বাক্ষর করার কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্তের সহযোগিতা তারা করেননি। কোনো স্বাক্ষর দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি এটি শুনে ‘হাস্যকর’ বলেছেন। এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, যারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন তাদের জিজ্ঞেস করেন। তারা বিস্তারিত বলতে পারবে। রওশনপন্থি নেতা ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি এখনো ক্লিয়ার না। আপনাকে পরে জানাতে পারব। সকালে প্রেসনোট (জাপা) নামক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লাঙ্গল মাল্টিমিডিয়ার পক্ষে কাজী লুৎফুল কবীর প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি দেন। সেই কাজী লুৎফুল কবীরকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

ওই সভার কার্যপত্রে স্বাক্ষর থাকা জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ উদ্ভট, বানোয়াট ও মিথ্যা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেব আছেন, থাকবেন। বেগম রওশন এরশাদ ম্যাডাম আমাদের মায়ের মতো। তিনি আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। জানা যায়, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির রওশনপন্থিরা। অন্যদিকে রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে অনড় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নতুন ফর্মুলা তৈরি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। তবে ফর্মুলাটি তিনি উন্মুক্ত করছেন না। সরকার উদ্যোগী হয়ে সর্বদলীয় সরকারের আয়োজন করলে সেখানেই তৃতীয় এই ফর্মুলা জানাবেন তিনি। ভারত সফররত জিএম কাদের সে দেশের একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে ততই রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে জাতীয় পার্টি। দলটির প্রধান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রয়েছেন দিল্লি সফরে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এই প্রতিনিধিদলের দিল্লি সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।