ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আড়াই বছর ধরে বন্ধ সেতাবগঞ্জ চিনিকল

তারপরও নির্মিত হচ্ছে ৮ কোটি টাকার ইটিপি

তারপরও নির্মিত হচ্ছে ৮ কোটি টাকার ইটিপি

দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকলে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য পরিশোধানাগার (ইটিপি) বসানোর কাজ চলছে। আড়াই বছর আগে বন্ধ হওয়া কারখানাটি চালুর ওপর গুরুত্ব না দিয়ে ইটিপি নির্মাণে অর্থের অপচয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৩ সালে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও আখের উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা কারণে লোকসান গুনতে শুরু করে কারখানাটি।

২০২০ সালে এসে মিলের লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ৪০০ কোটি টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরে লোকসানের মুখে দেশের ছয়টি কারখানার সঙ্গে সেতাবগঞ্জ চিনিকলেরও মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে ব্যাংকে ঋণের সুদ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ও বেতন-ভাতা বকেয়ার পরিমাণ ছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, কারখানার জন্য ইটিপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারখানাগুলোকে আধুনিকায়ন করতে সরকার যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে দেশের ছয়টি চিনিকলে ইটিপি নির্মাণকাজ শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, কারখানা বন্ধ নয়, মাড়াই স্থগিত করা হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। তার আগেই ইটিপির ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে। অবশিষ্ট যেসব কাজ বাকি ছিল, ঠিকাদাররা সেগুলো করছেন। তবে ঠিকাদার এখনো তাদের কাছে ইটিপি হস্তান্তর করেননি। চিনিকল কার্যালয় সূত্র জানা গেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ইটিপি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। নির্মাণের মেয়াদকাল ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন। নির্ধারিত সময় পর ৩ বছর অতিবাহিত হলেও বর্জ্য শোধনাগারটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, শোধনাগারটির এখনো ২০ শতাংশ কাজ বাকি আছে। ৩ হাজার ৮৬০ একর জমি নিয়ে এই কারখানার খামার। বর্তমানে ৬৮৪ একর জমিতে আখ রয়েছে। এই আখ সরবরাহ করা হচ্ছে ঠাকুরগাঁও চিনিকলে। আর ২০২০ সাল পর্যন্ত মিলে স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন ৭৫০ জন। বর্তমানে আছেন ৯৫ জন। মিলের আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা দৈনিক ১ হাজার ২৫০ টন। সর্বশেষ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার আগের অর্থবছরেও এখানে ৬১ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়েছিল। বোচাগঞ্জ উপজেলায় সেতাবগঞ্জ চিনিকল এলাকায় সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, চারদিকে সুনসান নীরবতা। অথচ একটা সময় কৃষক-শ্রমিকদের হাঁকডাক আর কারখানার শব্দে মুখর ছিল পুরো এলাকা।

প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় মাঠের মধ্যে আখ পরিবহণের ট্রাক্টর-ট্রলি ঝোপঝাড়, লতাপাতায় ঢেকে আছে। কারখানার ভেতরে পাইপলাইনগুলোর প্লাস্টার খসে পড়ছে। মেঝেতে বিভিন্ন জায়গায় মূল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। মরচে পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম অনেক যন্ত্রপাতি। এদিকে কারখানার কার্যক্রম বন্ধে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থায় নেমেছে ধস। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। আখ চাষ ছেড়েছেন সাধারণ কৃষক। গ্র্যাচুইটির টাকা না পেয়ে কষ্টে দিন যাপন করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।

দীর্ঘ সময় কার্যক্রম বন্ধ থাকলে কারখানার উৎপাদান ক্ষমতা হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য করেছেন কারখানার উপ-প্রকৌশলী রুবেল পারভেজ। তিনি বলেন, কার্যক্রম স্থগিত থাকার কারণে কিছু কিছু যন্ত্রপাতির সমস্যা হবে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে। অনেকে বলেন, এত টাকা খরচ করে ইটিপি না করে আগে কারখানাটি চালু করা জরুরি ছিল। কিছুদিন আগে মিল চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও। যদিও চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে কারখানা চালুর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই- এমনটিই জানিয়েছেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীর। আখচাষীরা বলছেন, নিয়মিত ভাবে টাকা পরিশোধ করা হলে আখের অভাব হবে না। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, প্রতিবছর ৩৩ থেকে ৩৪ কোটি টাকা ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে কারখানার ব্যাংক ঋণগুলো মওকুফ করে দিয়ে চিনিকলগুলোকে আধুনিকায়ন করে উৎপাদনে যাওয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত