ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

একদফা আন্দোলন

সাফল্য নিয়ে বিএনপির তৃণমূলে হতাশার সুর

সাফল্য নিয়ে বিএনপির তৃণমূলে হতাশার সুর

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একদফা আন্দোলন করছে বিএনপি। একই দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে বিএনপির মিত্ররাও। নয়াপল্টনে এক সমাবেশ থেকে গত ১২ জুলাই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় দলটি। এরপর থেকে একদফা দাবি আদায়ে রাজপথে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী দলগুলোও সংহতি জানাচ্ছে। আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা সায় দিলেও জনগণের তেমন সাড়া পাচ্ছে না বিএনপি। জনগণের সায় না পাওয়ায় সরকার পতনের একদফা আন্দোলন নিয়ে দিন-দিন হতাশ হচ্ছে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে, পদযাত্রা, গণমিছিল ও মহাসমাবেশসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এছাড়া ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি করেও কোনো ফায়দা হয়নি দলটির। সমন্বয়হীনতার কারণে অবস্থান কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। অপরদিকে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শক্ত অবস্থানের মুখে টিকতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা।

রাজনৈতিক মহলে বিএনপির একদফা আন্দোলনের সাফল্য দিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠানো যাবে না বলেও মনে করছেন বিএনপির কর্মীরা। তবে নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি। আপাতত ঢাকায় টানা আন্দোলনের পরিবর্তে পুনরায় তৃণমূল থেকে কর্মসূচি শুরু করতে চায় দলটির হাইকমান্ড। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ, পদযাত্রাসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কিছুটা সময় নিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির দিকেই নজর তাদের। জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত করা হবে নতুন কর্মসূচি। তবে ঢাকা ঘিরেই চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে হলে দলীয় সক্ষমতা যাচাই করা জরুরি। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দলে অনেকে মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও অনেকেই আবার বেশ ভালো আছেন। ত্যাগীরা জেল খাটলেও পদ-পদবি নিয়ে অনেকে সরকারি নেতাদের সঙ্গে ওঠা-বসা, ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এরা সুযোগ সন্ধানী। দল ক্ষমতায় এলে এরাই; কিন্তু থাকেন সবার আগে। তিনি আরো বলেন, পরিবর্তন আসতে হবে দলের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই। বিএনপি জনগণের দল, নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে অতীতে দলটি জনগণের সেবা করেছে। এখন যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন জরুরি।

রাজপথে না থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড জানিয়েছে- চলমান আন্দোলনে যারা মাঠে থাকবে, আগামীতে তাদেরই দলে মূল্যায়ন করা হবে। অন্যথায় বিবেচনার কোনো সুযোগ থাকবে না।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির আরেক নেতা বলেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা সব সময় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আন্দোলনের ডাক দিলে বিএনপির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা ঘরে বসে থাকেন। আর কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচিতে না থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ওপর নির্যাতন চালায়, মামলা দেয়ার পাশাপাশি গণহারে গ্রেপ্তার করে। এ কারণে আন্দোলন সফল হয় না। তাই আন্দোলন করতে হলে আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠে নামাতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন ও রাজপথের লড়াকু দলকে মোকাবিলা করা কঠিন। রাজনীতির মাঠে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাংলাদেশের হাল ধরেছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূল পর্যায়ে রয়েছে এ দলটির রাজনৈতিক শেকড়। আর এই শেকড় অত্যন্ত মজবুত। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে আওয়ামী লীগের মতো দ্বিতীয় কোনো রাজনৈতিক দল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই। তাই রাজপথে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করা বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য কঠিন। আর কারণেই বিএনপি বিদেশি শক্তির মুখোপেক্ষী হয়ে সরকার পরিবর্তনের দিবাস্বপ্ন দেখছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমত হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা রাজপথে নেই। কর্মীদের মাঠে নামিয়ে তারা অনেকটা ‘নিভার’ জীবনযাপন করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন ভূমিকায় অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে না আলোচনা-সমালোচনা। এমনকি লন্ডন থেকেও কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যাপারে সমালোচনার সুর বাজতে শুরু করেছে।

নতুন কর্মসূচি: একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নতুন কর্মসূচি হিসেবে আজ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে কালো পতাকা মিছিল এবং আগামীকাল দেশের সব মহানগরে গণমিছিল করবে বিএনপি। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর যাওয়ায় আজকের কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীরা তাকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আজ পাচ্ছে না। এর আগে এক দফা দাবিতে গত ১৮ আগস্ট যুগপৎভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে পৃথক গণমিছিল করে বিএনপি। সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, জোট ও বিএনপির সমমনারাও সেদিন এ কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত