বাল্কহেডের বেপরোয়া চলাচল

কর্ণফুলীতে ফেরি চলাচলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে কালুরঘাট সেতু বন্ধ হওয়ার পর থেকে নানাভাবে বিড়ম্বনা পোহাচ্ছেন নদীর দুইপাড়ের লোকজন। সেতু বন্ধ করার পর চালু করা হয় ফেরি। আর এই ফেরি সার্ভিস চালুর পর থেকে লোকজন চলাচলে নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন। দুটি ফেরি চালু থাকার কথা থাকলেও থাকে গড়ে একটি। এতে বাড়তি লোকজন এবং যানবাহন পারাপারে প্রতিদিন সময়ক্ষেপন হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন যন্ত্রনা হিসেবে দেখা দিয়েছে ফেরি চলাচলে বালুবাহী বাল্কহেডের বাধা। এতে লোকজনের বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। গেল দুই সপ্তাহে কর্ণফুলীতে বেপরোয়া গতিতে চলাচলরত বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলরত ফেরিকে কয়েক দফা ধাক্কা দিয়েছে। সর্বশেষ ধাক্কার ঘটনাটি ঘটে বুধবার বিকাল ৫টায়। এ সময় যাত্রীসহ ফেরি বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেও ফেরির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছে ফেরিতে থাকা গাড়িসহ শত শত যাত্রী। লোকজন ফেরিতে করে নদী পারাপারে চরম শঙ্কায় পড়েছেন। অনেকে সহসা বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।

এদিকে ফেরিকে বাল্কহেডের ধাক্কার ঘটনায় নানা সমালোচনা চলছে। লোকজন স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে চান্দগাঁও ও বোয়ালখালী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ধাক্কা দেয়া বাল্কহেডের দুইজনকে। বিষয়টি স্বীকার করে চান্দগাঁও থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বাল্কহেডের ধাক্কায় দুর্ঘটনার পরই মামলা হয়। তদন্তও দ্রুত শুরু করে পুলিশ। এরই মধ্যে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনার তদন্ত চলছে।

এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ধাক্কা দেয়ার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। এর আগে রাতের বেলা আরো দুইবার ফেরিকে ধাক্কা দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সর্বশেষ বুধবারের ধাক্কার ঘটনায় ফেরির কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে আমরা কাজ করছি। যাতে কোন ধরনের দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি না হয়।

পুলিশ জানায়, ধাক্কার কারণে ফেরি মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা ছিল। অল্পের জন্য ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে ফেরি। ঘটনার পর পরই সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের এক সহকারী প্রকৌশলী মামলা করেছেন। ওই বাল্কহেডের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো রাহাত হোসেন এবং আহাদ হোসেন। এই ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে।

ফেরির যাত্রীরা জানান, গত বুধবার বিকাল ৫টার দিকে গাড়িসহ লোকজন নিয়ে ফেরি পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে পার হওয়ার সময় বালুবাহী একটি বাল্কহেড বেপরোয়া গতিতে দক্ষিণ দিক থেকে এসে ফেরিকে জোরে ধাক্কা দেয়। এসময় ফেরিটি প্রায় কাত হয়ে যায়। এ সময় ফেরি ভর্তি লোকজন এবং গাড়ি ছিল। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। কিছু বুঝে উঠার আগেই বালুবাহী এই নৌযানের (বাল্কহেড) ধাক্কায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠে। ফেরির যাত্রীদের কিছু না হলেও ফেরির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেপরোয়া গতিতে চলাচলরত অবৈধ এসব বাল্কহেডের সঙ্গে ফেরির সংর্ঘষে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অন্যথায় সবাইকে দুর্ঘটনার দায় বহন করতে হবে।

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়জুড়েই চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। বিশেষ করে কালুরঘাট সেতুর উত্তর-পূর্ব পাশের বোয়ালখালীর কধুরখীল অংশ থেকে শুরু করে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত দেদার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আবার কালারপোল হয়ে ভেল্লাপাড়ার পরের অংশ পর্যন্ত অসংখ্য স্থান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর এবং জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বালু উত্তোলনের অনুমোদন নিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। এসব বালু পরিবহন করা হচ্ছে অবৈধ বাল্কহেড দিয়ে। এগুলোর চলাচলের কোনো অনুমোদন নেই। এ ধরনের ২ শতাধিকেরও বেশি বাল্কহেড কর্ণফুলী হয়ে কালুরঘাট সেতুর উভয় পাশে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে। এসব বাল্কহেডের ধাক্কায় বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফেরি। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।