ইসির ভোটের প্রস্তুতি

চলছে কেনাকাটা ও প্রশিক্ষণ

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনি প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে সংসদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের মালামাল কেনা-কাটা এবং প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ।

সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিলে কমিশন ২০১৪ সালের মতোই দ্রুত উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সংসদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মালপত্রও কেনা হচ্ছে। কারণ সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই ওই বছরের ১৯ জানুয়ারি আগের নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয়টি ধাপে ওই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় এক মাস পর ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন হয় পাঁচ ধাপে ওই বছরের ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত।

উপজেলা পরিষদ আইন অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সেই হিসাবে উপজেলা নির্বাচনের সময় শুরু হবে চলতি বছরের নভেম্বরের শুরু থেকেই।

জানা যায়, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও ৪৫৮ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ২২৩ জন (বিদ্রোহীসহ) প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে এ পদে বিএনপির ১৫৮ জন (বিদ্রোহীসহ) এবং জামায়াতের ৩৬ জন নির্বাচিত হন। এছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) সমর্থিত তিনজন ও অন্যান্য দল সমর্থিত ৩৮ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

এদিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করছে ইসি। এক্ষেত্রে ইসি সচিবালয়ে কর্মরতদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) প্রশিক্ষণের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে। আগামী ২৬ আগস্ট ইনস্টিটিউটে দুটি ব্যাচে দিনব্যাপী এই ‘কোর ট্রেইনার’ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি ব্যাচে ২৫ জন করে মোট ৫০ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সংসদ নির্বাচনের তফসিল আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। গত ১৬ আগস্ট ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করে ইসি। এবার ৪২ হাজার ৪০০টির মতো ভোটকেন্দ্র হতে পারে। আর ভোটকক্ষ হতে পারে দুই লাখ ৬১ হাজার ৫০০টি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরপরই শুরু হবে ব্যাপক আকারে প্রশিক্ষণের কর্মযজ্ঞ। ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রকাশ করবে ইসি। এদিকে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশের পরপর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের দিকে মনোযোগ দেবে সংস্থাটি। আর তা সামনে রেখেই আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধেই শুরু হতে পারে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এরপর ভোটের ১৫ দিন আগে হতে পারে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ।

এ বিষয়ে ইটিআই মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞে ইসি সচিবালয়ের সব কর্মকর্তাই সম্পৃক্ত হয়ে পড়বেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন, বিধি ও কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে সবাই সমানভাবে অবগত নন। তাই নির্বাচনের মূল কাজ শুরু হলে কাজের গতি যেন বাড়ে, সেই জন্যই প্রথমে এই কোর ট্রেনিংয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে মূলত অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন অন্যদের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুটি ব্যাচে ২৫ জন করে ৫০ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এতে মূলত উপ-সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।

তিনি বলেন, এবার সংসদ নির্বাচনে ৯ লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন পড়বে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে। প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সেপ্টেম্বরের শুরুতেই এবং বড় পরিসরে প্রশিক্ষণ ভোটের ১৫ দিন আগে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।