দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ফেসবুকে ভুয়া তথ্যে দেশজুড়ে তোলপাড়

কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আগামী ৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) তফসিল ঘোষণা করা হবে। ১৯ নভেম্বর (রোববার) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। ২২ নভেম্বর (বুধবার) মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। ২৯ নভেম্বর (বুধবার) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। ৩০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রতীক বরাদ্দ এবং ২৩ ডিসেম্বর (শনিবার) ভোটগ্রহণ করা হবে’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে তোড়পাড় শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতি দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এই খবরকে ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।

তারা মনে করেন, দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বেজে ওঠার প্রেক্ষাপটে এমন একটি ভুয়া খবর মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। তবে তারা বলছেন, নির্বাচনি বছরে এ ধরনের কোনো খবর যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ ছড়িয়ে দিতে না পারে সেজন্য বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক হতে হবে।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল, প্রতীক বরাদ্দ ও ভোটগ্রহণের তারিখ নিয়ে ফেসবুকে ভুয়া তথ্য ছাড়িয়ে পড়ায় গতকাল সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। অফিস আদালত এবং রাস্তাঘাটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষ আলাপ-আলোচনা করতে থাকে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশি রাষ্ট্রগুলো ও সংস্থার মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কোন সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলাপ-আলেচনা চলছে।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংবিধান অনুসারে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচনকালীন সরকার কেবল নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। সীমিত আঙ্গিকে পরিচালিত নির্বাচনকালীন সরকার কেবল রুটিন ওয়ার্ক করবে।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও গোপনে প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার জন্য এরইমধ্যে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিকদলগুলোও। তাই দেশে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের সুশীল সমাজের সঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে ইচ্ছুক বিভিন্ন বিদেশি সংগঠনের অগ্রবর্তী দল এরইমধ্যে আলোচনা করেছে। এছাড়া অনেক স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন আবেদন করেছে। এসব সংগঠনের মধ্যে কাদের চূড়ান্ত অনুমতি দেয়া হবে তা নিয়ে এরইমধ্যে পর্যালোচনা চলছে। আগামী নভেম্বর মাসে নির্বাচনের তফসিল দিয়ে ডিসেম্বর মাসে ভোটগ্রহণের একটা খসড়া তারিখ নির্বাচন কমিশন থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

দেশে ‘নির্বাচনি মুড’ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে এমনি তথ্য ছড়ানোর ফলে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী নেতাকমী, সমর্থক ও ভোটারা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করছে নির্বাচনি বছরে সামাজিক মাধ্যমগুলো এভাবে বিভ্রান্তির খবর প্রকাশ করলে তা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হবে না। কেননা মানুষ এখন ফেসবুকের তথ্যকে আমলে নিয়ে নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছে। ফলে তথ্য বিকৃতির আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে তথ্যনির্ভর নয় এমন লেখা-লেখির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার সময় এসেছে। অন্যথায় স্বাধীন সংস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের তার দায়িত্ব পালনে অস্বস্তি বাড়বে। তবে ফেসবুকের এ তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় সংসদ  নির্বাচন নিয়ে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান সাংবাদিকদের বলেছেন, ফেসবুকে নির্বাচন সংক্রান্ত যে তথ্যটি ঘুরছে তা আদৌ সত্য নয়। তিনি বলেন, এটা শতভাগ গুজব। এই তথ্যের কোনো সত্যতা নেই। তবে এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ গুজবে কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হয় আমি সেই অনুরোধ জানাব। কোন উদ্দেশে করানো হচ্ছে, কেইবা করাচ্ছে এটা নিয়ে ‘উই আর নট বদার্ড’। যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তাদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। আমরা নির্বাচনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছি সে অনুযায়ী কাজ চলছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী যথাসময়ে কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এ বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যে তথ্যটি ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে সেটি ভুয়া। নির্বাচন কমিশন কখনো এত আগে জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে তথ্য দেয় না। আমরা এ বিষয়টি কমিশনের নজরে আনব। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এর আগে, গত ৩ আগস্ট দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফেসবুকে সাম্প্রদায়িকতা, বিদ্বেষ, সহিংসতা ছড়ায় এমন অপপ্রচারণামূলক কন্টেন্ট ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি।

ওই সময় অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমরা ফেসবুকের একটা টিমের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমাদের যে টেকনিক্যাল লোক আছে, তাদের নিয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বসেছিলাম। কারণ এখানে কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার ছিল। এটা ছিল প্রাথমিক আলোচনা। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের একজন ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হবে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য। তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

তিনি বলেন, মূলত ব্যাপারটা ছিল ফেসবুকে যেসব অপপ্রচার হয়, সেই অপপ্রচারগুলো কীভাবে রোধ করা যায়, বিশেষ করে- ঘৃণাত্মক মন্তব্য, সাম্প্রদায়িকতা বা অন্যান্য যেসব ভায়োলেশন হয়। সেগুলো তারা ডিলিটসহ ব্লক করবে। মূলত এই ছিল মিটিংয়ের বিষয়। আমাদের কাছে যেটা নেগেটিভ প্রতীয়মান হবে, আমরা তাদের জানাব। তারা সেটাকে রিমুভ করে দেবে। শুধুমাত্র নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন কনটেন্টের বিষয়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পর এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।

সূত্র জানায়, ফেসবুকে যে তথ্যটি ছড়িয়েছে তা মূলত ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের। ওই বছরের ৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। সেবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১৯ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই হয় ২২ নভেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২৯ নভেম্বর আর ভোটগ্রহণ হয় ২৩ ডিসেম্বর।