ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজারে ডেঙ্গুর টিকা আনতে চায় ভারত

বাজারে ডেঙ্গুর টিকা আনতে চায় ভারত

বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা বেড়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তবে এরমধ্যেই ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে আশার আলোর দেখিয়েছে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারত। আগামী আড়াই বছরের মধ্যে বাজারে ডেঙ্গুর টিকা আনতে চায় দেশটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার কামড়ে দেশে শত শত মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। টিকার অভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষকে ঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে মানুষ মারা যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আনতে পারলে বাংলাদেশে আমদানি করা সহজ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে গতকাল শনিবারের তথ্যতে বলা হয়েছে, দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার সিটির পাঁচজন, বাকি চারজন ঢাকা সিটির বাইরে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫৩৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৯৬০ জন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্ত বেড়ে ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ?শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১ হাজার ৯৬০ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৩৩, ঢাকার বাইরের ১ হাজার ১২৭ জন। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে পাঁচজন ঢাকার এবং চারজন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৩ হাজার ৪৮৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৫৮ হাজার ৬৯৫ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৪১১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৯ হাজার ২৪৭ জন এবং ঢাকার বাইরের ৫৪ হাজার ১৬৪ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একইসঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।

জানা গেছে, আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালস লিমিটেড (আইআইএল)। এরই মধ্যে টিকার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা।

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দারাবাদভিত্তিক কোম্পানি আইআইএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. আনন্দ কুমার জানান, টিকার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবী, যাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। টিকা নেওয়ার পর তাদের কারো দেহে বিরূপ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েনি।

আনন্দ কুমার জানান, ‘আমাদের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল প্রায় শেষের পথে। এটি শেষ হওয়ার পর কমপক্ষে আরও কয়েকটি ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে। কারণ প্রথম ট্রায়ালে কোনো টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়।

‘সব ট্রায়াল শেষ হতে সময় লাগবে অন্তত দুই বছর। তাই আমরা আশা করছি, আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যেই ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আনতে পারব।’

টিকা প্রস্তুতের জন্য যে বিশেষ ভাইরাসটি ব্যবহার করেছে আআইএল, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছেন আনন্দ কুমার।

বর্ষাকালে ভারতীয় উপমহাদেশে ডেঙ্গু রীতিমতো আতঙ্কের অপর নাম। গত কয়েক বছর ধরেই প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে মশাবাহিত এই রোগটির ব্যাপক সংক্রমণ ও তার প্রভাবে মৃত্যু প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এডিস মশা এই রোগটির প্রধান বাহক। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই রোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভারতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৪৬৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৬ জনের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ঘটলেও পরের বছর ২০২১ সালে ভারতে এই রোগের সংক্রমণের হার বেড়েছে ৩৩৩ শতাংশ। আর ২০২১ থেকে ২০২২ সালে এই এই রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে ২১ শতাংশ।

ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এরই মধ্যে ১ লাখ ছাড়িয়েছে, মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৫ শতাধিক। এই আক্রান্ত-মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে জুন থেকে আগস্ট— এই ৩ মাসের মধ্যে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখছে বাংলাদেশ। ৫ শতাধিক মৃত্যুর মধ্যে আড়াই শতাধিক মৃত্যু ঘটেছে এই মাসে।

উল্লেখ্য, আইআইএল ছাড়াও আরও ২টি ভারতীয় কোম্পানি ডেঙ্গুর টিকা বাজারে আনার চেষ্টা করছে। কোম্পনি ২টি হলো সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং প্যানাকিয়া বায়োটেক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত