বিএনপির প্রভাবশালী ছয় নেতা দেশের বাইরে

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

চলছে বিএনপির একদফা আন্দোলন। এরই মধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। চিকিৎসার কাজে দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের মার্চে ভারতের শিলং আদালত তাকে খালাস দিলে কিছুদিন পর তিনি দিল্লি যান। সেখানে তিনি স্ত্রীসহ অবস্থান করছেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা বার্ধক্যজনিত কারণে রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, তরিকুল ইসলাম ও এমকে আনোয়ার মারা গেছেন।

দলটির প্রভাবশালী এই ৬ নেতার একসঙ্গে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ বলছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। আবার অনেকে বলছেন, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা চিকিৎসার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক লবিংয়ের কাজও সেরে নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির এই ৫ নেতা এক সঙ্গে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যায়নি। বিভিন্ন সময়ে গিয়েছেন। তাদের সবারই বয়স বেশি। নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তারা। তাদের নিয়ে সমালোচনা করা ঠিক না। তারা চিকিৎসা শেষ করে শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন। যদিও কেউ কেউ তাদের একসঙ্গে বিদেশ থাকাকে অন্যভাবে দেখছেন। তারা বলছেন, বিএনপির একদফা আন্দোলন চলছে। কয়েকমাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে আগে আন্তর্জাতিক লবিংয়ের অংশ হিসেবেও তারা চিকিৎসার পাশাপাশি দলীয় কাজ সেরে নিতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম। তারা চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তাদের সফরসঙ্গী হিসেবে ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহও রয়েছেন। বিএনপি মহাসচিবের একান্ত সহকারী মো. ইউনুস আলী বলেন, ‘স্যার ও ম্যাডাম দুইজনই চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। সাথে স্যারের ছোট মেয়ে গেছেন। সিঙ্গাপুরে বিএনপি মহাসচিব ফলোআপ চেকআপ করাবেন। চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্টও করা হয়েছে। তার স্ত্রী রাহাত আরা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালে চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট করেছেন। ৭৬ বছর বয়সী ফখরুল এর আগেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে কারাবন্দি অবস্থায় তার ঘাড়ের ইন্টারন্যাল ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়লে মুক্তির পর সেখানে গিয়ে চিকিৎসার করান তিনি। এরপর প্রতিবছরই ফলোআপ চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে যেতে হয়।

গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস। বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত ২৭ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ড. খন্দকার মোশাররফ ব্রেইন স্ট্রোক করে গত ১৮ জুন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।

জানা য়ায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বেশ কিছুদিনযাবৎ দেশের বাইরে আছেন। শুরুতে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেও বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমও চিকিৎসাজনিত কারণে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। প্রসঙ্গত, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় আছেন।