কিশোর খুনের কিনারা হয়নি দুই দিনেও

মাস্ক পরা যুবককে খুঁজছে পুলিশ

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হিলভিউ আবাসিক এলাকায় উদ্ধার করা কিশোরের মরদেহের কিনারা হয়নি দুই দিনেও। নূর নবী (১৪) নামে নিহত ওই কিশোরের দেহে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। হত্যার আগে তার অভিভাবকদের কাছে মুক্তিপণ চেয়েছিল অপহরণকারীরা। পুলিশ এখন হত্যার কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। গতকাল শনিবার অপরহরণকারীদের দেয়া বিকাশ নম্বরের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ।

পুলিশ জানায়, হত্যার ঘটনার তদন্ত অব্যাহত আছে। নূর নবীর মরদেহ পাওয়ার আগের দিন তাকে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকায় দেখা গিয়েছিল। সে মাস্ক পরা এক যুবকের সঙ্গে হাসিখুশিভাবে ঘোরাফেরা করে। ওই যুবককে মোবাইলে ছবি তুলতেও দেখা গেছে নুর নবীর সঙ্গে। খুন হওয়া নুর নবীর সঙ্গে ঘর ছাড়া অপর কিশোরের নাম ‘হোসেন’। নুর নবীর সঙ্গে থাকা ‘মাস্কপরা’ যুবককে খুঁজে পাওয়া গেলে হত্যার রহস্য উন্মোচন হতে পারে। নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে গেল গত শুক্রবার মো. নুর নবীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে বাসা ওই কিশোরের। তার বাবার নাম গোলাম রসুল। বড় ভাই রমজান হোসেন নুর নবীর মরদেহ শনাক্ত করেছেন। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে বন্দর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে ‘হোসেন ভাই’ বলে একজনের কথা বলা হয়েছে। নিহত কিশোর ঢাকা ছাড়ার আগে যাদের সঙ্গে খেলতে বাসা থেকে বের হয়েছিল তাদের হোসেন ভাইয়ের সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিল। গত ২১ অগাস্ট যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের বাসা থেকে খেলতে বের হয়ে নুর নবী নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় পরদিন যাত্রাবাড়ী থানায় তার বাবা নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। মামলায় বলা হয়েছে, ২৪ আগস্ট দুপুরে নুর নবীর বাবাকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা দিলে তাকে ঘরে পৌঁছে দেয়ার কথা বলা হয়। পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, আমরা কিশোর নূর নবী হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছি। জন্মদিনে যাওয়ার কথা বলে হোসেন নামে অপর এক কিশোরের সঙ্গে নুর নবী ঢাকা ছেড়েছিল। ১৬ বছর বয়সি ওই কিশোরকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, নুর নবীকে অপহরণ করে চট্টগ্রামে আনা হয়নি। সে স্বেচ্ছায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছিল। যে নম্বর থেকে নুর নবীর বাবাকে প্রথম ফোন করা হয়েছিল সেটি অ্যাপ নম্বর। পাশাপাশি যে তিনটি নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেগুলোর অবস্থানও চট্টগ্রামে ছিল না। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যে স্থান থেকে নুর নবীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেখানকার আশপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেগুলোর একটিতে ২৪ আগস্ট দুপুরে নুর নবীকে ষোলশহর স্টেশনে দেখা গেছে। এ সময় তার সঙ্গে ২৫ থেকে ২৬ বছর বয়সি ‘মাস্ক পরা’ এক যুবককে দেখা যায়। কিন্তু নূর নবীর বন্ধু হোসেনকে দেখা যায়নি। ওই যুবকের সঙ্গে নুর নবী স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা এবং ওই যুবককে মোবাইল ফোনে তার ভিডিও করতেও দেখা গেছে। মুক্তিপণ দাবি করে নুর নবীর বাবার মোবাইলে যে ভিডিও পাঠানো হয়েছিল সেটি ‘মাস্ক পরা’ যুবকই করেছিল। মরদেহ উদ্ধারের পরপরই নুর নবীর সঙ্গে ঘর ছাড়া হোসেন এবং মাস্ক পরা যুবকের খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের খোঁজ মিললে হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ উদ্ঘাটন হবে। নবীর সঙ্গে সঙ্গে ঘর ছাড়া অপর কিশোর হোসেনকে পাওয়া গেলে মাস্ক পরা যুবকটির পরিচয় জানা যাবে। পাশাপাশি তারা ২২ ও ২৩ তারিখে চট্টগ্রামের কোথায়, কার কাছে ছিল সেটিও পরিষ্কার হবে। ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, নুর নবীর বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করে যে বিকাশ নম্বরটিতে টাকা পাঠাতে বলা হয়েছিল সেটি ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকার কাছেই চশমা হিল সংলগ্ন এলাকার একটি দোকানের। তবে নম্বরটি দোকানির ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর ছিল। এ ঘটনায় মো. সুজন নামের ওই দোকানিকে আটক করা হয়েছে। দোকানি দাবি করেছে এক ব্যক্তি তার কাছ থেকে বিকাশ নম্বর চেয়ে নিয়েছিল। সেখানে পাঁচ হাজার টাকা আসলেও সেগুলো নিতে আসেনি। কিন্তু এজেন্ট নম্বর না দিয়ে কেন ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর দেয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যার কারণে সুজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।