সিইসির সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক

ব্রিটিশ হাই কমিশনারও চাইলেন সুষ্ঠু ভোট

এবারও উপেক্ষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিদেশি রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগীরা পর্যবেক্ষণে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও এ পর্যন্ত কেউ নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেনি। গতকালও আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। দীর্ঘ এ বৈঠকেও নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে বিএনপির দাবি অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গটি আসেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি তুলেছে, সেটি কার্যত অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে। কেন না বিদেশিরা অবাধ, সুষ্ঠু ভোটের কথা বললেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন। অথচ বিএনপির প্রত্যাশা ছিল বিদেশি শক্তির ‘হস্তক্ষেপ’ নির্বাচনকালীন ‘তত্ত্ববধায়ক’ সরকারের দাবি আদায় করে নেবে। তবে বিএনপির সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ফলে সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। সূত্র জানায়, এর আগেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানেও তারা বলেছেন, তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চান। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ পরিবেশ দেখতে চায়। হাই কমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্য অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে উৎসাহিত করে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে পারে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনার হয়ে আসেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধান সারাহ কুক। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ।

সিইসির সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তার দলের সঙ্গে আমার এটি প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে।

ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান, ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমও উপস্থিত ছিলেন।

পরে বৈঠক প্রসঙ্গে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, সারাহ কুক আমাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। বিভিন্ন বিষয় আলাপচারিতার মধ্যে নির্বাচন প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। উনি জানতে চেয়েছিলেন, আমাদের প্রস্তুতি কেমন। উনি নির্বাচন সম্পর্কে আশাবাদী যে সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

তিনি বলেছেন, নির্বাচনটা যেন অংশগ্রহণ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়। এ বিষয়ে আমরা আমাদের তরফ থেকে জানিয়েছি যে, আমরা কী কী ভূমিকা পালন করব।

ব্রিটিশ হাই কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচনে গণমাধ্যমের প্রসঙ্গও উঠে আসে জানিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়টা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা তাকে জানিয়েছি, আমরা স্বচ্ছতার উপর খুব জোর দিয়ে থাকি। এজন্য পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যমের কাছ থেকে খুব বস্তুনিষ্ঠ সহায়তা কামনা করব। কেন না, নির্বাচন যে একটা দর্পণ, সেটা প্রতিফলিত হবে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে।

সারাহ কুক গণমাধ্যমের জন্য ইসির নীতিমালা প্রসঙ্গ তুলেছেন জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, গণমাধ্যমের জন্য যে গাইডলাইনটি আমাদের তরফ থেকে হয়েছে, সেখানে উনি প্রথম বলেছিলেন, এটায় তো পারমিশন নিয়ে যেতে হবে। আমরা ব্যাখা করেছি, সেখানে ‘পারমিশন’ বলে কোনো শব্দ ছিল না।

সিইসি বলেন, শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যম থেকে যে দাবিটা আমাদের কাছে আসছে, সেটা হলো- মোটরসাইকেল ব্যবহারের বিষয়ে। আমরা বলেছি, একটা কারণে এটা বাদ দিয়েছিলাম; মোটরসাইকেলের অপব্যবহার হবে কি না- যারা মাসলম্যান (পেশিশক্তি প্রদর্শনকারী), তারা এই মোটরসাইকেল ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি করবে কি না। ‘একইসাথে বলেছি, গণমাধ্যমের যে দাবি, সেটাও যৌক্তিক। মোটরসাইকেল ছাড়া নির্বাচনি কর্মকাণ্ড কভার করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হতে পারে। সেজন্য আমরা বলেছি, এটা আমরা আন্ডার রিভিউ রেখেছি। সেটা আমরা পরিবর্তন করব।’ সারাহ কুক ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ কথা বলেছেন জানিয়ে সিইসি বলেন, সারাহ কুক প্রত্যাশা করেছেন- নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হয়। আমি জোর দিয়েছি, ইলেকশন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হতে হলে যারা পোলিং এজেন্ট, তাদের ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ। ইসি কর্মকর্তরা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আভাসও রয়েছে।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক নির্বাচনি অনুসন্ধানী দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে তারা কিছু সুপারিশ করে। অক্টোবরে আসবে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষণে দল।