প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক

সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন

১ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ পরিবর্তন করে ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০২৩’ প্রণয়নে খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইনের খসড়ায় সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। অনেক অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় ওই আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধিকাংশ ধারা নতুন আইনে থাকছে। তবে বিতর্কিত বিভিন্ন ধারায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মানহানি মামলায় কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে রাখা হচ্ছে শুধু জরিমানার বিধান। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে কমানো হচ্ছে সাজা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারায় দ্বিতীয়বার অপরাধ করলে দ্বিগুণ সাজার বিধান ছিল, নতুন আইনে দ্বিতীয়বার সাজার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এর আগে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচার নতুন আইন পাসের পর ওই আইনের অধীনে চলবে।

জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানির বিষয়টি রয়েছে। এতে বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) সেকশন ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, সেজন্য তিনি অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ সংঘটন করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আগের আইনে জেলের বিধান বেশি ছিল। নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণ বেশি রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার একটি মামলা রয়েছে। মানহানির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কেউ জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করতে পারলে তখন ৩ থেকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, আইনটি সাইবার অপরাধ বন্ধে অত্যন্ত সহায়ক হবে। পাশাপাশি সাংবাদিকরা যেসব সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন সেটাও দূর হবে এবং সাংবাদিক হয়রানিও বন্ধ হবে। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে জনগণের মধ্যে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে যে মানসিক চাপ বা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা সাইবার নিরাপত্তা আইনে দূর হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেসব ধারায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেগুলোর সাজা সাইবার নিরাপত্তা আইনে কমিয়ে আনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বেশকিছু ধারা জামিন অযোগ্য ছিল, সেগুলোকে নতুন আইনে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনে মানহানির অপরাধের জন্য কারাদণ্ড বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য অনধিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানা ১ টাকাও হতে পারে। অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে আদালত এটি নির্ধারণ করবে। তবে জরিমানা না দিলে ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। কিন্তু অপরাধের মূল শাস্তি হবে জরিমানা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সালে অনুমোদনের পর ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে উল্লেখ করে আইন মন্ত্রী বলেন, আমাদের ৫ বছরে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সারাবিশ্বে আইসিটি-সংক্রান্ত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আইসিটি সংক্রান্ত বিশ্বের যে ব্যাপ্তি কিংবা ধরন, তার বেশ পরিবর্তন এসেছে। সবকিছুকে বিবেচনায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটি প্রয়োগের শুরুতেই কিছু অপব্যবহার বা মিসইউজ দেখতে পাই, যা আমি অকপটে স্বীকার করতে কখনোই বিন্দু পরিমাণ কুণ্ঠাবোধ করিনি এবং করব না। সে সময় এ আইনের অপব্যবহার প্রতিরোধে আমরা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেই। ফলে এই আইনের অপব্যবহার অনেকটাই কমে যায়।

গত ৭ আগস্ট সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবি বলেছে, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন যে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, তা যেন ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত না হয়। আইনটি যেন শুধু সাইবার অবকাঠামোর নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। একই সঙ্গে নতুন আইনটি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতেও সরকারের প্রতি তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল সোমবার সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) আইনের খসড়া, বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) আইনের খসড়া, ভূমি সংস্কার আইনের খসড়া, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আইনের খসড়া, জাতয়ি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া এবং ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া এবং বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে আরো ছয়টি বিষয় অবহিতকরণ করা হয়।