ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘নূরুল হুদা কমিশনের পেনশন সুবিধার প্রস্তাব ছিল ‘অযৌক্তিক’

‘নূরুল হুদা কমিশনের পেনশন সুবিধার প্রস্তাব ছিল ‘অযৌক্তিক’

দায়িত্বকাল শেষ হওয়ার পর পেনশন সুবিধা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাব ‘অযৌক্তিক’ ছিল। তাই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন ওই প্রস্তাবে একমত নয় বলে আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

গতকাল নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এ কথা বলেন। নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধার কোনো পরিবর্তন আসছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে যে অধ্যাদেশ আছে, তা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন পান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং হাইকোর্টের বিচারপতির সমান অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা সুযোগ সুবিধা পান। এছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলো সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির সমান পাবেন।

কেএম নূরুল হুদা কমিশনের সময়কার এই ইসি সচিব বলেন, গত কমিশন একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। বর্তমান কমিশনের মতামত কী সেটা জানার জন্য মন্ত্রণালয় আবার সেটা ফেরত পাঠিয়েছে। তখন আমরা দেখলাম যে, খসড়া আইনে পেনশনের বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পেনশন বিষয়ে আমরা একমত না বলে জানিয়েছি।

তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে সামরিক আইনের অধ্যাদেশ ছিল, সেটা বাতিল করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সম্মানী ও ভাতার বিষয়টি কেবল বাংলায় করে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে সংযোজন-বিয়োজন কিছুই হবে না। অধ্যাদেশে যা ছিল তা-ই থাকবে।

কেএম নূরুল হুদা কমিশনের সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনের পর তারা সুযোগ-সুবিধা চেয়ে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। পরবর্তীতে তারা আইন সংশোধনের ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

চাপ এড়াতে নির্বাচনি কর্মকর্তার সঙ্গে ডিসি-এসপি : নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে অনেক সময় একজন কর্মকর্তা (কেবল নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা) থাকলে অনেকেই সেখানে প্রভাব বিস্তাব করে। এই চাপ অতিক্রম করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান করে জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করে দিয়েছি।

নিজস্ব কর্মকর্তাদের এখতিয়ার কমিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে ডিসি-এসপিদের রাখার বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, আইনে বলা আছে নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রণয়ন করবে। যখন তফসিল ঘোষণা হবে তখন রিটার্নিং অফিসারের কাছে তালিকা দেবে। কাকে দিয়ে তালিকা করাবে, সেটা কমিশনের ব্যাপার। এতদিন ট্রেডিশনালি যেটা হয়ে আসছিল ভোটকেন্দ্রের তালিকা, অতীতের তালিকা ফলো করে কিছু যোগ বিয়োগ করা হতো।

তিনি বলেন, এটার একটা নীতিমালা আছে যে কোথায় ভোটকেন্দ্র করা যাবে, কোথায় করা যাবে না। সেটা নীতিমালা অনুযায়ী এটা একসময় জেলা প্রশাসক করতো, আমরা যখন চাকরি করতাম। এরপর যখন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেওয়া হলো তখন উনার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক করতেন। এরপর উপজেলা ও জেলায় নির্বাচন কর্মকর্তা থাকায় তাদের দিয়ে করা হতো। এখন আমরা যখন জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলি, তখন তারা কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলেছিলেন।

সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক দূরে যেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু কাছাকাছি ভোটকেন্দ্র করলে অনেক কেন্দ্র হয়। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই ভোটকেন্দ্র কমিয়ে যদি বুথের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাহলে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো যাবে। দুই নম্বর বিষয় হলো আমাদের কর্মকর্তা থাকলে ভালো হবে এটা আমরা মনে করি না। ভালো হতে পারে, মন্দও হতে পারে। আমরা বিবেচনা করে দেখলাম স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) আরো আছে, তাদের সাথে নিয়ে কাজটা করলে আরো ভালো হবে। তখন আমরা শিক্ষা বিভাগকে নিলাম, কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের। কাজেই সবাইকে নিয়ে কমিটি করলে একক কোনো ব্যক্তির প্রভাব থাকবে না।

মো. আলমগীর আরো বলেন, আমরা ভোটকেন্দ্র করার সময় অভিযোগ পাই। একজন কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দেওয়া থাকলে অনেকেই সেখানে প্রভাব বিস্তাব করে। তারা চাপে মুখে থাকে। বাস্তবতা হলো এই চাপ অতিক্রম করা কঠিন হয়। চাপ সহ্য করতে গেলে অনেক সময় তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এজন্য চাপ যাতে না হয়, চাপ যাতে না দিতে পারে এবং ন্যায় সঙ্গত ভোটকেন্দ্র যাতে হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পুলিশ, শিক্ষা ও আমাদের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। এতে একক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এছাড়া এতোগুলো কর্মকর্তার ওপর চাপ প্রয়োগ করাও সম্ভব হবে না। আবার তারা তালিকা করার পর অভিযোগ আসলে তা শুনানির পর চূড়ান্ত হবে।

তিনি আরো বলেন, এই ভোটকেন্দ্রের একটা ডাটাবেজ করা হবে। কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও এগুলো ব্যবহার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময়ও আবার চূড়ান্ত করা হবে। কারণ অনেক কেন্দ্র পরিবর্তন করতে হবে। প্রাকৃতিক কিংবা অন্য কারণে কেন্দ্র করার অনুপযোগী হতে পারে। প্রথম শর্ত বিদ্যামানটা বহাল রাখতে হবে। তবে নতুন ভবন হলে, বা পাশে নতুন একটি কলেজ হলে কিংবা প্রাকৃতিক কারণে অনুপযোগী হলে নতুন করে কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। কাজেই ডাটাবেজ থেকে কোনটা ব্যবহার করব, কোনটা করবো না, তা নির্বাচন আসলে চূড়ান্ত করা হবে।

মাঠ কর্মকর্তাদের নির্ভুল ভোটার তালিকা দেওয়ার জন্য কেন বলা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কারণ ত্রুটি থাকতে পারে। বাবার নামে আকারে ভুল, আবার মায়ের নামে হ পড়ে নাই, এমন হতে পারে। এই সমস্ত আবেদন যেগুলো আছে, অর্থাৎ নিজ উদ্যোগে নয়, যেগুলো আবেদন আছে যে ঠিকানা পরিবর্তন, জন্ম তারিখ সংশোধন, পোস্ট কোড ভুল ইত্যাদি আবেদন ঠিক করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

প্রতিদিন ভোটার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকবে। যখন তফসিল দেব আমরা ঘোষণা দেব যে, এই তারিখের পর যারা ভোটার হবেন তারা এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত