ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভোগান্তিতে ৯ হাজার শিক্ষার্থী

ঢাবির কার্জন ও মোকাররম ভবনে নেই পর্যাপ্ত ক্যান্টিন

ঢাবির কার্জন ও মোকাররম ভবনে নেই পর্যাপ্ত ক্যান্টিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কার্জন হল ও মোকাররম ভবন এলাকার একাডেমিক ভবনগুলোতে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থীর শ্রেণি কার্যক্রম চলে। শিক্ষার্থীদের এত বড় একটি সংখ্যার জন্য নেই স্বাস্থ্যসম্মত ও পর্যাপ্ত খাবারের ক্যান্টিন বা ক্যাফেটেরিয়া, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েন এসব ভবনে ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীরা। যদিও বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট শিক্ষার্থীরা দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া না মেলায় সমাধান হয়নি এ সমস্যার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ও মোকাররম হোসেন ভবনের পাঁচটি অনুষদে মোট ৩৪টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এসব বিভাগ/ইনস্টিটিউটে প্রতিনিয়ত প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস করেন। এছাড়া, মোকাররম ভবনের পাশে রয়েছে বিজ্ঞান লাইব্রেরি যেখানে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য ছুটে আসেন। প্রতিনিয়ত এত শিক্ষার্থীর আনাগোনার পরও এই এলাকায় নেই উপযুক্ত ও মানসম্মত কোন ক্যাফেটেরিয়া ক্যান্টিন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে নানা অবকাঠামো ও ভবন তৈরি হলেও এখানে ক্যাফেটেরিয়া ক্যান্টিনের দাবি সবসময় অবহেলিত হয়ে এসেছে। প্রশাসন এসব দাবি বাস্তবায়ন করেনি।

সরেজমিন কার্জন হল ও মোকাররম ভবন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মোকাররম ভবন এলাকার সাইন্স লাইব্রেরির পাশে চায়ের চারটি ও খাবারের দুটি ছোট দোকান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব দোকানে পরিবেশিত খাবারের মান খুবই নিম্নমানের। দোকানগুলোর আশপাশ অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর যার কারণে বাতাসে ভাসছে দুর্গন্ধ। অল্প একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে যায়। এমনকি এখানে খাবার খেয়ে হাত ধোঁয়ারও কোনো ট্যাপ বা বেসিন পর্যন্ত নেই। কোনোরকমে বসে বা দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের খাবার খেতে হয়। অন্যদিকে, কার্জন হলের পিছনের দিকে বিজ্ঞান কারখানার পাশে ‘জহিরের ক্যান্টিন’ থাকা সত্ত্বেও সেখানে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকে না; বসারও কোনো পরিবেশ নেই বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন।

এছাড়া সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (কারাস)-এ গবেষকদের জন্য একটি ক্যান্টিন রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা খেতে পারেন না। মোকাররম ভবনের পাশেই অবস্থিত এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবনে একটি ক্যান্টিন রয়েছে, যা সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও সেখানকার খাবারের দাম শিক্ষার্থীদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এসব দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী পূর্ণা সাহা বলেন, নিজ বিভাগে বাহিরের শিক্ষার্থীদের আধিক্য ক্যান্টিনে তুলনামূলক বেশি। এর ফলে বেশিরভাগ সময় স্বল্প বিরতিতে গণিত ভবনের শিক্ষার্থীরাই খাবার পেতে হিমশিম খায়। অন্যান্য ক্যান্টিনের ব্যবস্থা এতটা শোচনীয় আর অপরিকল্পিত যার দুর্ভোগে হাজার শিক্ষার্থীর অবস্থাই রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান আবিদ বলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের রুটিনই এমনভাবে সাজানো যে শিক্ষার্থীরা বাধ্য তাদের দুপুরের খাবারটা বাসার বাইরে কোথাও থেকে ব্যবস্থা করতে সেখানে যায়। আমি মনে করি এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা। খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত সময় মাত্র ৩০ মিনিট দেয়া থাকে যে সময় এর মাঝে ক্যাম্পাসের বাইরে কোথাও থেকে খেয়ে এসে ক্লাসে আসা অসম্ভব। গণিত ভবন আরআইএনএফএসে যে সুবিধা আছে সেটাও তাদেরই প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই সেখানে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা হবে এমন ভাবাটা অযৌক্তিক। এদিকে কার্জন হলে ক্যাফেটেরিয়া; মোকররম ভবনে ক্যান্টিন ও কার্জন হল এলাকায় ফার্মেসি/ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় এ মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ ক্যান্টিন ক্যাফেটেরিয়ার অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করে অতি দ্রুত এর সমাধানের কথা জানান। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ক্যান্টিনের অপ্রতুলতা রয়েছে এটা সত্য। এ লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে নতুন একটি ক্যান্টিন তৈরির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্থাৎ আমরা ডিজাইনসহ সবকিছু ওকে হয়ে আছে। এখন শুধু বাজেটের অপেক্ষায় আছি। বাজেট পেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত