চট্টগ্রামে প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ অক্টোবর-নভেম্বরে উদ্বোধন

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আগামী অক্টোবর কিংবা নভেম্বরে এটির উদ্বোধন হতে পারে বলে জানা গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামবাসীর জন্য স্বপ্নের মতো। এটি নির্মাণ শেষ হলে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই শাহ আমানত বিমান বন্দরে যাত্রীরা দ্রুত পৌঁছতে পারবেন। পথে পথে যানজটে ফ্লাইট মিস হওয়ার মতো ঘটনা আর ঘটবে না। এছাড়া নগরীতে চলাচলে গতি আসবে। উন্নত হবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।

সরেজমিন নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ের লালখানবাজার ও টাইগার পাস এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, জোরোশোরে চলছে কাজ। যেন দম ফেলার সময় নেই। প্রকল্পকাজে যুক্ত কর্মীরা সার্বক্ষণিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বড় বড় ক্রেন দিয়ে প্রকল্পের যন্ত্রাংশ সরানো হচ্ছে। আবার কাজের অংশ হিসেবে বড় পরিসরে ক্রেনগুলো চলছে বিরামহীনভাবে। মূলত এই অংশের কাজই এখন বাকি আছে। ১৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় কাজ এখন শেষ। এটি শেষ হওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন সর্বশেষ মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ হচ্ছে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নামকরণের বিষয়টি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে। পাশাপাশি নবনির্মিত বাকলিয়া এক্সেস রোডটি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের প্রয়াত পিতা জানে আলম দোভাষের নামে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, নগরীর লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ করা হচ্ছে। অক্টোবরের শেষে কিংবা আগামী নভেম্বরে এই এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল শুরুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে বাকলিয়া এক্সেস রোড ও আউটার রিং রোডের সংযোগ সড়কটি ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লালখানবাজার পর্যন্ত নভেম্বরে উদ্বোধন করা হবে। যদি লালখানবাজার পর্যন্ত পারা না যায়, তাহলে টাইগারপাস পর্যন্ত উদ্বোধন করা হবে। তবে লক্ষ্য থাকবে পুরো কাজ শেষ করে উদ্বোধন করার।

সিডিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ৩ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এই দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র‌্যাঙ্কিন। ইতোমধ্যে ১৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আছে ২৪টি লুপ ও র‌্যাম্প এবং ৩৯০টি পিলার।

এদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি হবে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। গেল ২৪ আগস্ট সিডিএ ভবনে আয়োজিত ৪৫৮তম বোর্ড সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস। সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পতেঙ্গা আউটার রিং রোডের একটি সংযোগ সড়ক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার নামে করার সিদ্ধান্ত নেওা হয়েছে।

নামকরণ প্রসঙ্গে সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, বোর্ড সভার সদস্যরাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সিডিএ চেয়ারম্যান প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অনুমোদিত প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। শিগগিরই এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসবে।

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা জহির উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক পথ হচ্ছে বিমানবন্দর সড়ক। নানা কারণে পথে পথে দিনভর যানজট লেগে থাকে। এতে বিমানবন্দরগামী লোকজন চরম বিড়ম্বনার মুখে পড়েন। অনেক সময় যানজটে আটকে বিদেশগামী যাত্রীরা ফ্লাইট মিস করার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েন। নতুন এক্সপ্রেসওয়ে এই ধরনের দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে স্থায়ী মুক্তি দেবে।