ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সরকার পতনে বিএনপির নতুন রূপরেখা ‘ছাত্রঐক্য’

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্দিহান
সরকার পতনে বিএনপির নতুন রূপরেখা ‘ছাত্রঐক্য’

রাজপথের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে একের পর কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই আন্দোলনের নামে কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। তবে তাদের কোন কর্মসূচিই হালে পানি পায়নি। ২০১৪ সালে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাওপোড়াও’র মতো কর্মসূচি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। সহিংস রাজনীতি পরিহারের কথা বললেও বিভিন্ন সময়ে মারমুখী হয়ে উঠছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের কর্মসূচি পালনের আগে-পরে দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের রূপরেখা ঘোষণা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো সরকার পরিচালনা করে থাকে। জনগণের কল্যাণে যা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি কাজে লাগায়। সংসদের প্রতিনিধিত্ব নেই- এমন একটি রাজনৈতিক দল কীভাবে রাষ্ট্রকে পুনর্কাঠামোতে রূপদান করবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের তোপের মুখে পড়ে বিএনপি। রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার হতে হয়। কিন্তু বিএনপির কোনটিই নেই। সংসদে থাকলে আইন প্রণয়ন, আইন পরিবর্তন কিংবা আইন বাতিল বা রহিতকরণ করার বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেত বিএনপি। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ছয়টি আসন পেলেও পরবর্তীতে পদত্যাগ করায় সংসদের তাদের নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়।

নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি থেকে নির্বাচন বর্জনের রাজনীতিতে ফিরেছে বিএনপি। জাতীয় সংসদের উপ- নির্বাচন থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি তারা। বিদেশি শক্তির ওপর ভর করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার পথে দলটি।

এবার বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ১৯টি ছাত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে সরকারবিরোধী ছাত্র ঐক্য। যদিও এখন পর্যন্ত সরকার বিরোধী ওই ছাত্র ঐক্যের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।

ছাত্র ঐক্যের পরিধি বাড়াতে গত রোববার ছাত্রদলের নেতাদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ছাত্রদল নেতারা সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা, ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে কর্মসূচি দেয়াসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে ছাত্রদল নেতারা আগামী মাসেই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে।

বিএনপি ৩৬ দলের সমন্বয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করলেও তাদের দাবির প্রতি জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি। অবশেষে মূল দলের বাহিরে গিয়ে ছাত্রদের ওপরে ভর করে সরকারের পতনের আশা করছে বিএনপি। ‘ছাত্রঐক্য’ নামে একটি রূপরেখা দাঁড় করাতে চাচ্ছে দলটি।

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সামনে নামকাওয়াস্তে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছে, ৩৬ টি রাজনৈতিক দল যেখানে সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করতে পারছেনা। সেখানে ছাত্রঐক্য দিয়ে স্বপ্ন পূরন হবে না। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ১৯টি ছাত্র সংগঠন নিয়ে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে কি না সন্দেহ রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ না করলে এই আন্দোলনও ব্যর্থ হবে। কোনো ফল বয়ে আনবে না। তবে ছাত্রদের এই জোটে ছাত্র শিবিরকে রাখা হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শাখা শিবিরকে না রাখার সিদ্ধান্ত বিএনপির রাজনৈতিক মহলের শীর্ষ পর্যায়ের। কেন না, বিএনপির নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক জোট গঠন করা হয়েছে সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলাম নেই। ১৯ ছাত্র সংগঠনের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ছাত্র মিশন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাতীয় ছাত্র সমাজ (জাতীয় পার্টি, কাজী জাফর), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, খেলাফত ছাত্র মজলিস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাগপা), ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজ (বিজেপি, পার্থ), বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজ, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি) ও ছাত্র ফোরাম।

ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান বলেন, আমরা একদফা আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখবো। সম্প্রতি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে বৈঠক করেছি। সবশেষ আমরা ১৯টি ছাত্র সংগঠন মিলে মতবিনিময় করেছি। খুব শীঘ্রই আমরা বৃহৎ আন্দোলনের জন্য যা যা করার সবই করব।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, দেশ ও জাতির বর্তমান সংকট নিরসনের জন্য ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে আমরা তাদের মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চেষ্টা করব। প্রাথমিকভাবে ১৯ ছাত্র সংগঠনের সাথে বৈঠক করেছি। এতে সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত