দিনে দিনে এডিস মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যু বাড়ছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো কোনোভাবেই এডিস মশা নিধন কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে চলতি বছরে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মানুষের ঘটেছে। এত আক্রান্ত ও এত মৃত্যু দেশের মানুষ আগে কখনো দেখেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গতকাল শনিবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছর ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত ১৯ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৬১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। গত বছরের অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন, আর সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন নভেম্বর মাসে। সবে সেপ্টেম্বর মাস শুরু হয়েছে। চলতি মাসে এবং পরের দুই মাসে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা কেউ বলতে পারছে না। তবে এই সময়ে পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। কারণ, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৩৫২ জন। এ নিয়ে মোট সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ ২২ হাজার ৬৯৪ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দুই হাজার ৩৫২ জন। এরমধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৯৮২ জন। ঢাকার বাইরে ১৩৭০ জন। ওই সময়ে সারা দেশে ডেঙ্গুতে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৭ জন এবং ঢাকার বাইরের চারজন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৯ হাজার ৫৯২ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৬৮ হাজার ১০২ জন।
এছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৪৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৫ হাজার ২৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ৬৩ হাজার ২১১ জন।
এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ৫৭ জেলায় রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অসংখ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তবে সব হিসাব হয়তো সরকারের খাতায় আসছে না। বছরের শুরুতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও মে-জুন মাস থেকে ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২৭ জনের মৃত্যু হয়।
ওই বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে আট মাসে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
