১৩ দিনের সফর

আজ ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ৪৩তম ‘আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন’ এবং ১৮তম ‘পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে’ যোগ দিতে আজ জাকার্তার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। রাষ্ট্রপ্রধান ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে ৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যাবেন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা এবং অন্যান্য সফরসঙ্গীদের নিয়ে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটের আজ দুপুরে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) ত্যাগ করার কথা রয়েছে। বিমানটি আজ সোয়া ৬টায় জাকার্তার সোয়েকার্নো-হাত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার-বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনও সফরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে থাকবেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৩ সালের আসিয়ান চেয়ার জোকো উইডোডোর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে (জেসিসি) ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ৪৩তম আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সংস্থা) শীর্ষ সম্মেলনে এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

‘প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু প্রেক্ষিত-আসিয়ান’ থিম সামনে রেখে জাকার্তায় ৪৩ তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন তিন দিনব্যাপী ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মো. সাহাবুদ্দিন জাকার্তার হোটেল লা মেরিডিয়ানে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করবেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ১৮তম ‘পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে’ও যোগ দেবেন। রাষ্ট্রপতি সেখানে ‘গেস্ট অব চেয়ার’ হিসেবে আইওআরএ’র দৃষ্টিকোণ থেকে ‘প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুকে সমর্থন করার জন্য আঞ্চলিক স্থাপত্যকে শক্তিশালী করা’র বিষয়ে সমাপনী ভাষণ দেবেন।

এছাড়া, রাষ্ট্রপতি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোডো এবং থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং তিমুর-লেস্টের আরও কয়েকজন রাষ্ট্রীয় নেতার সঙ্গে পৃথক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি হুতান কোটা গেলোরা বুং কার্নোতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকোই কর্তৃক আয়োজিত ‘গালা নৈশভোজে’ যোগ দেবেন।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো ৪৩তম আসিয়ান সম্মেলনের সময় ১২টি সভায় সভাপতিত্ব করবেন। আসিয়ান হচ্ছে- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা, যার মধ্যে ব্রুনাই দারুসসালাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাও পিডিআর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং তিমুর লেস্টে বা পূর্ব তিমুর দেশগুলো রয়েছে। আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত সদস্যদেও একটি দ্বিবার্ষিক সভা। এছাড়া, এটি একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক (এশিয়া) এবং আন্তর্জাতিক (বিশ্বব্যাপী) সম্মেলন হিসেবে কাজ করে, যাতে বিশ্ব নেতারা বিভিন্ন সমস্যা এবং বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে, সহযোগিতা জোরদার করতে এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এ সম্পর্কিত শীর্ষ সম্মেলন এবং বৈঠকে যোগদান করেন।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এই শীর্ষ সম্মেলনের সময়টাতে সম্মেলন বা সম্মেলন নয়, এমন প্রায় ১২টি বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। আসিয়ান সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের (ইএএস) সভাপতিত্ব করবেন, যা ১০টি আসিয়ান দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ফেডারেশন, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতসহ ১৮ সদস্য নিয়ে গঠিত।

ওয়েবসাইটে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞিপ্তিতে বলা হয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ফোরামের নেতা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিচালক এবং বিশ্বব্যাংকও জাকার্তায় ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছেন।

জাকার্তায় ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে অংশীদারদের সাথে আসিয়ান সহযোগিতা উন্নয়ন এবং শক্তিশালীকরণ নিয়েও আলোচনা হবে।

৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ চীন সাগর, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মুক্ত অঞ্চল (এসইএএনডব্লিউএফজেড), আসিয়ান মেরিটাইম আউটলুক, ইন্দো প্যাসিফিকের আসিয়ান আউটলুক (এওআইপি) সম্পর্কিত আচরণবিধি এবং মিয়ানমারের বিষয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

এটা আশা করা হচ্ছে যে জাকার্তায় ৪৩ তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও প্রণয়ন করবে, যেমন- আসিয়ান অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা, সুনীল অর্থনীতি এবং সবুজ অর্থনীতি, সেইসাথে ডিজিটাল অর্থনীতি এবং পেমেন্ট ইকোসিস্টেম সম্পর্কিত চুক্তির বিষয় রয়েছে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সফরে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে জ্বালানি ও স্বাস্থ্য সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮ তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন শেষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. রেবেকা সুলতানা স্বাস্থ্যের পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে জাকার্তা ত্যাগ করবেন। সূচি অনুযায়ী, ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।